শিবালয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় যমুনার তীরে ভাঙন
- কোহিনুর ইসলাম শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যমুনা নদীর চরাঞ্চলসহ তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়াভাবে ফের ড্রেজিং শুরু করেছে পতিত সরকারের দোসররা। এতে সার্বিক সহযোগিতা ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে জেলা যুবদলের এক বহিষ্কৃত নেতা। এই নেতা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের একটা লিস্ট তৈরি করে, তাদের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিগত সরকারের স্থানীয় এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও পরে এস এম জাহিদের মাটিখেকো চক্রটি শুধু খোলস বদলিয়ে নতুন করে বালু উত্তোলনে সক্রিয় হয়ে উঠছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পদ্মা-যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি কাটার মেশিন ও দেশীয় ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে তারা অবৈধভাবে বালুমাটি উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে নদী তীরে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় পাশের গ্রামগুলো নদীতে চলে যাচ্ছে। সেই সাথে যমুনার ভেতর দিয়ে নেয়া জাতীয় বৈদু্যুতিক লাইনের শক্তিশালী একটি খুঁটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এটা ভেঙে গেলে দেশের একাংশের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব অপতৎপরতার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে আরিচা ঘাটসহ অন্যান্য এলাকায় স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। এ ছাড়া শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন নদীভাঙনের শিকার স্থানীয়রা।
সরজমিন দেখা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে আটটি কাটার মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে বালুখেকোরা। দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া কোনো বালু মহাল।
এক মাসের বেশি সময় ধরে বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসন এখানে নিষ্ক্রিয়। তারা মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও বালু উত্তোলন কিন্তু থামছে না। ফলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর ও ফসলি জমি একের পর এক বিলীন হচ্ছে নদীতে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা ও হাটবাজারের বিভিন্ন স্থাপনা। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তের কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালীর যোগসাজশে এসব করা হচ্ছে। বালু তোলা বন্ধে স্থানীয়রা নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আরিচা ঘাটে বিক্ষোভও করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।
সরজমিন দেখা গেছে, আলোকদিয়া এলাকার যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবির) টাউয়ারের পাশে আটটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে নদীতে চলে গেছে একটি মসজিদ, হাজার বিঘা কৃষিজমি ও কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। এ ছাড়া ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে নির্মিত মুজিব কেল্লা।
ভাঙনের শিকার ছলিম উদ্দিন বলেন, শীতকালে নদীভাঙন কম থাকলেও এখানে নদীভাঙন আরো বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ভাঙনের কারণে কয়েকটি পরিবারসহ আমার পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি।
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলাল হোসেন বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আবারো অভিযান চালানো করা হবে। তবে আমাদের অভিযান বার্তা তারা আগেভাগেই পেয়ে যায় এবং আমরা যেতে যেতে তারা সটকে পড়ে। কোনোভাবেই নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। বালু তোলার মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা