নিপাহ ভাইরাস আতঙ্কে ফুলবাড়ীতে বিক্রি কমেছে খেজুরের রস : নয়া দিগন্ত
- জাকারিয়া শেখ ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিথভিন্ন গ্রামের খেজুর রসের ঐতিহ্য অনেক দিনের। শীত এলেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পাটালি তৈরি করা আর সেই পাটালির গন্ধে মুখর হয়ে ওঠে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। খেজুরের রস সংগ্রহ করা, কাঁচা রস পান করা এ এলাকার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। আজ সেই ঐতিহ্যে অনেকাটাই ভাটা পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিনের এ ঐতিহ্যটির উপর প্রভাব পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে, উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রামরাম সেন গ্রামের রেজাউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রতি বছর খেজুর রস বিক্রি করে সংসারের খরচ নির্বাহ করেন। রেজাউল গ্রামে ঘুরে ঘুরে রস বিক্রি করেন। এবার তিনি আর সেই কাজটি করতে পারছেন না। কারণ মানুষ নিপাহ ভাইরাসের ভয়ে এখন আর খেজুরের রস কিনতে চান না।
রেজাউল ইসলাম আরো জানান, ‘আগে সকাল হলেই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রস কিনতো। এবার রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ভয় পাচ্ছে নিপাহ ভাইরাসের।’
উপজেলার রামরাম সেন গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন বথলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা সকালে উঠে রস খেতাম, ভাবতাম না কোনো রোগের কথা। এখন খেজুরের রস খেতে চাইলেই সবাই ভয় দেখায়, নিপাহ ভাইরাস হতে পারে। মন চাইলেও এখন আর খেজুরের রস খাওয়ার সাহস পাই না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ, যার মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি। ২০২২-২৩ সালে দেশে এই রোগে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন এবং ২০২৪ সাথলে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের লালা বা বিষ্ঠা মিশ্রিত হওয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। ফলে কাঁচা রস পান করলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
ফুলবাড়ী উপজেলায় খেজুরের রসের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে এই ঐতিহ্যবাহী পানীয়ের স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেজুর রসে বাদুড়ের লালা বা মল পড়েলে সেই রস থেকে সহজেই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই সতর্ক বার্তাই মূলত গ্রামবাসীকে রস থেকে দূরে রেখেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘খেজুর রস যদি ঢেকে রাখা হয় এবং পরিষ্কারভাবে সংগ্রহ করা হয়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। তবে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’
খেজুর রস নিয়ে আতঙ্ক নয় বরং সচেতনতা তৈরি হয়, সেই আশাই করছেন স্থানীয়রা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা