সুনামগঞ্জে বোরো ধান আবাদে দুশ্চিন্তায় কৃষক
হাওরে জলাবদ্ধতা- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ সুনামগঞ্জ
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮
স্বাভাবিক সময়ের পর বোরো ধান রোপণ করলে সময় মতো ফসল ঘরে তোলা যায় না। আগাম বন্যার কবলে ফসল তলিয়ে যাবার শঙ্কা থাকে
সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ফসল (ধানের চারা) রোপণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জামালগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ ফসল ভাণ্ডারখ্যাত পাকনা হাওরে বেশ কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা থাকায় বছরে একটি মাত্র ফসল বোরো ধান আবাদে বিলম্বিত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যদি বোরো ধান রোপণে ১০-১৫ দিন পিছিয়ে পড়তে হয়, তাহলে আগাম বন্যার কবলে পড়ে যায় ফসল। এ কারণে কৃষকদের দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না।
চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে হাওরের পানি ধীর গতিতে নিষ্কাশন হওয়ায় পৌষে ধানের চারা রোপণে কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণেই বিপাকে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সুনামগঞ্জের মানুষ বছরে মাত্র একটি বোরো ফসলের ওপর জীবন-জীবিকা নির্ভর করেন। ফসল ঘরে ওঠলে সারা বছর তাদের আনন্দে সময় কাটে। আর প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্টির কারণে কোনো বিপর্যয়ের কারণে যদি ফসলের ক্ষতি হয়, তাহলে সারা বছরই তাদের কাটে অনাহারে অর্র্ধাহারে। সুনামগঞ্জের বোরো ধান ঠিকমতো ঘরে উঠলে দেশের অর্থনীতিতে তা অনবদ্য ভূমিকা রাখে।
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন ও ভীমখালী ইউনিয়নের হাজারো কৃষক বছরে একটিমাত্র বোরো ফসল পাকনার হাওরে রোপণ করেন। সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল ঘরে উঠলে দেশের অর্থনীতিতেও তা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পাকনা হাওরে এ বছর জলাবদ্ধতার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন জামালগঞ্জের পাকনা হাওরে দেখা গেছে, পাকনা হাওরের পানি নিষ্কাশনের রাস্তাটি প্রতি বছরের মতো এবারো গজারিয়া স্লুইস গেট ও ঢালিয়া স্লুইস গেট পর্যন্ত পলি মাটিতে ভরাট হয়ে আছে। যার ফলে সময়মত পানি নিষ্কাশন হতে পারেনি। এই হাওরের ১৪ হাজার ৪৪৮ হেক্টর বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে দুই হাজার ৯০০ হেক্টর জমি অনাবাদি এবং বাকি ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। যা থেকে আনুমানিক ৬৫ হাজার ৫০০ মে: টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে।
এলাকার সমাজকর্মী জুলফিকার চৌধুরী রানাসহ আরো কয়েকজনের প্রচেষ্টায় প্রথম দফায় গজারিয়া স্লুইস গেটের উজান দিকের পলি মাটি কিছুটা সরিয়ে দিলে সাময়িক কিছুটা পানি নিষ্কাশন হওয়া উপকৃত হন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক সিরাজুল হক ওলি বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন করা না হলে বোরো আবাদ বিলম্বিত হবে এবং আগাম বন্যায় ফসলহানির শঙ্কা থাকবে। তাই ফসলরক্ষায় আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। হাওরের জলাবদ্ধতা দূর করতে গজারিয়া স্লুইস গেট ও ঢালিয়া স্লুইস গেটের নালা খনন করে দিলে হাওরে কিছুটা আগাম সময়ে বোরো আবাদ করা যাবে। এতে আগাম বন্যা হলেও আমাদের শঙ্কা থাকবে না। কৃষক নবাব মিয়া বলেন, পানি নিষ্কাশনের সমস্যা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই আমরা এই সমস্যার কারণে ধান চাষ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ি। আমরা চাই প্রশাসন থেকে এর একটি স্থায়ী সমাধান করা হোক।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে কৃষকরা ঠিকমতো ফসল রোপণ করতে পারবে না। ফসল না হলে ফসল রক্ষা বাঁধ দিয়ে কী হবে? শুধু এই হাওরেই নয়, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এবার জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের বোরো রোপণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, কয়েকটি হাওরের জলাবদ্ধতা দূর করতে পাউবোকে সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগিরই হাওরের পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। আশা করি কৃষকদের বোরো রোপণে বিলম্ব হবে না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ফসলরক্ষার জন্য ৫৩টি হাওরে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ-বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকটি হাওরে পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা পাম্পের সাহায্যে কাজ করছি। আশা করি কৃষক ভাইয়েরা ফসল রোপণে কোনো সমস্যায় পড়বেন না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা