আড়াই বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম, চাহিদার অর্ধেক পানিও পাচ্ছে না নগরবাসী
- এম জে এইচ জামিল সিলেট
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭
সিলেট নগরীর আয়তন বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫৯.৫ বর্গ কিলোমিটারে। আয়তনের সাথে বেড়েছে জনসংখ্যাও। কিন্তু বাড়েনি নাগরিক সেবার মান। সুপেয় পানি পাচ্ছে না নগরীর অর্ধেকের বেশি মানুষ। আগের ২৭টি ওয়ার্ডে দৈনিক আট কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে পাঁচ কোটি লিটারেরও কম। বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো স্থাপিত হয়নি পানির লাইন। এসব ওয়ার্ডে পানির দৈনিক চাহিদা চার কোটি লিটার। পানির এই বিশাল সঙ্কট সমাধানে অনেকটাই নিরব সিসিক।
এদিকে নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধান করতে সিলেট ওয়াসা গঠনের পৌণে তিন বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। ফলে এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। নগরবাসীর পানির সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০২২ সালের ২ মার্চ পানি সরবরাহ ও পয়োঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সিলেট ওয়াসা) গঠন করা হয়। এর তিন মাস পর ২০২২ সালের ৫ জুন থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চার ধাপে ১১ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড গঠিত হয়। পরে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক এ কে এম হাফিজকে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের ভাগ্নী জামাই। নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার এই বাসিন্দা এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও নাক কান গলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে এখন অবসরে আছেন। দুই মেয়াদে বিএমএ সিলেট জেলার সভাপতি ছিলেন। আবদুল মোমেন সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ওয়াসা বোর্ড গঠিত হলেও এখনো হয়নি কোনো সভা, শুরু হয়নি কোনো কার্যক্রম। অসুস্থতাজনিত কারণে চেয়ারম্যান এখন নিষ্ক্রিয়। তিনি পদত্যাগ করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনো নগরে স্থাপিত হয়নি ওয়াসা কার্যালয়, নিয়োগ হয়নি জনবল।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর অর্ধেক বাসিন্দা সুপেয় পানির সঙ্কটের কারণে নানা দুর্ভোগে আছেন। ১০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে পাঁচ লাখ বাসিন্দাকে পানি সরবরাহ করতে পারছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিটির ৪২টি ওয়ার্ডে পানির চাহিদা দিনে ১২ কোটি লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে অর্ধেক। এ ছাড়া ১৫টি নতুন ওয়ার্ডে এখনো পানির লাইন স্থাপিত হয়নি। এতে চলতি মৌসুমে পানির সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেট ওয়াসা গঠন হয়েছে দুই বছর আগে কিন্তু এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে নগরীতে পানি সরবরাহ করছে সিটি করপোরেশন। মহানগরীর পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে দৈনিক আট কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও দেয়া হচ্ছে পাঁচ কোটি লিটার।
সিসিক সূত্র জানায়, নগরীর পাঠানটুলা, বাগবাড়ি (বর্ণমালা স্কুলের ভেতরে), সাগরদিঘির পাড় ডিপিএইচ-১ ও ডিপিএইচ-২, পুলিশ লাইন, দর্শন দেউড়ি, চাষনীপীর, তোপখানা পানি শোধনাগারসহ মোট আটটি পানির পাম্প দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো বা সম্পূর্ণ বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। এদিকে নগরীর পিটিআই স্কুলের পাম্প, সাগরদিঘির পাড় মৎস্য অফিসসংলগ্ন পাম্প, আনসার ক্যাম্প পাম্প, নয়াসড়ক খ্রিষ্টান টিলা পাম্প, শাহ মিরাজী (রা:) মাজার পাম্প, ছড়ার পাড় পাম্পসহ মোট ছয়টি পাম্প পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে, নতুন তিনটি পাম্প বসানোর কাজ এখন চলমান আছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে বেশিরভাগ পানির পাম্প অকোজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কার বা পুনঃস্থাপনের কোনো পদক্ষেপ না নিলেও বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে পানির বিল নেয়া হয়। সময়মতো সিটি কর দিলেও দীর্ঘ দিন ধরে সুপেয় পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই পানি সরবরাহ নেই। আবার কয়েকটি এলাকায় পানির সরবরাহ থাকলেও তা খুবই সীমিত পরিসরে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেট ওয়াসা গঠনের পর এর কার্যক্রম এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ডা: এ কে এম হাফিজ বলছেন তিনি অসুস্থ মানুষ। তার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা