২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঝিনাইগাতীর মহারশী নদী খালে পরিণত

তলদেশ ভরাট হয়ে সঙ্কটে ঝিনাইগাতীর মহারশী নদী : নয়া দিগন্ত -


শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় এককালের খরস্রোতা মহারশী নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বেদখল হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া মহারশী নদীর দু’পাড়ের শত শত একর জমি। অপর দিকে মহারশী নদীটি পানিশূন্য হয়ে পড়ায় পানির অভাবে সন্ধ্যাকুড়া থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহারশী নদীটি ভরাটের কারণে চরম অস্তিত্বসঙ্কটে রয়েছে ও ফসলি মাঠে পরিণত হয়েছে। অথচ সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের মহারশী নদীকে ইতঃপূর্বে বলা হতো মৎস্যসম্পদের ভাণ্ডার। দেশের মাছের চাহিদার এক বিরাট অংশের জোগান হতো মহারশী নদী থেকেই।

মহারশী নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া ও অপরিকল্পিত মাছ আহরণ এবং অত্যধিক রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন ক্রমেই কমে আসতে আসতে এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, হাট-বাজারে এখন আর দেশীয় প্রজাতির মাছ চোখেই পড়ে না। মাত্র দুই দশক আগেও ভাটি এলাকার অনেক লোক পালতোলা নৌকায় এ নদীপথেই ঝিনাইগাতীতে হাট-বাজার করত। বর্তমানে শীর্ণ রূপ নিয়েছে মহারশী নদী। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কিছু কিছু মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই। সামান্য বৃষ্টিতে পানি এলেও প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, শিং, মাগুর, টেংরা, পুঁটি, দারকিনা, মলা, ঢেলা, চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এ নদীতে। বলতে গেলে এসব মাছের পোনার দেখাও মিলছে না। ফলে এসব এলাকার বিপুলসংখ্যক মৎস্যজীবী হয়ে পড়েছে বেকার।

স্থানীয় লোকজন জানায়, সরকার দেশব্যাপী মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে প্লাবন ভূমিতে পোনা অবমুক্ত করে মাছ চাষ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ঝিনাইগাতীতেও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে; কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে এ নিয়ে সচেতন মহলের রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ।
‘প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ, দিন বদলের সুবাতাস’- এ স্লোগান ঝিনাইগাতীতে কতটুকু বাস্তবায়িত হয়, নাকি কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে সে দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের। তবে বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিদের আশঙ্কা আগামী বছর ঝিনাইগাতীতে প্রাকৃতিক মাছের সঙ্কট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
কৃষকরা জানান, মহারশী নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন মহারশী নদীর পানির সেচের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এক যুগে বালুখেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীটিকে মরা খালে পরিণত করে ফেলেছে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে ইরি-বোরো চাষাবাদ। অথচ নদীর নাব্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোনো মাথাব্যথা। ফলে অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে কৃষকরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement