রাজারহাটে সড়কের কাজ শেষ না করে দুই ঠিকাদারের টালবাহানা
- রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৭
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ না করে উধাও হয়ে যান ঠিকাদার। রাজারহাট থেকে আনন্দ বাজার ১২ কিলোমিটার সড়কের এ কাজটি শুরুর দুই মাসের মধ্যে কাজ বন্ধ করে সাব-ঠিকাদার উধাও হয়ে যান। এতে এলাকাবাসী পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। মূল ঠিকাদারকে এ বিষয়ে অবহিত করে উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী একাধিকবার চিঠি প্রদান করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
জানা গেছে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিন দফায় রাজারহাট থেকে আনন্দ বাজার ১২ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণের পর মাত্র একবার মেরামতের কাজ করা হয়। এ অবস্থায় ২০২৩ সালে রাস্তাটি মেরামতের কাজের টেন্ডার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর আরসিআইপির (রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট) অধীনে করা হয়। কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ টাকা ধরা থাকলেও প্রায় ১৬ ভাগ কমিয়ে ১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ১০ টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন রংপুরের ঠিকাদার খায়রুল কবির রানা। চুক্তির শর্তানুযায়ী ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে কাজটি সমাপ্তির কথা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদর বাজার সোনালী ব্যাংক মোড় থেকে উমর মজিদ ইউনিয়নের ফরকেরহাট বাজারের ওপর দিয়ে উলিপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের সাথে সংযোগ সড়কটি দুই উপজেলার জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। ১২ কিলোমিটারের এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন এবং পথচারী চলাচল করে। এ ছাড়া উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়ন থেকে রাজারহাট উপজেলা সদরে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটির বিভিন্ন অংশে পিচ ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দকে ভরা ছিল। তার ওপর রাস্তা খুঁড়ে রাখায় (সাববেজ) এবং পুরাতন রাস্তার ইট-পাথর উল্টে রাখায় চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় অন্তত ১৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নবাব জানান, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নেয়া কিংবা কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সাব-ঠিকাদার রনি ও আবু শামার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে এ বিষয়ে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলী পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
ঠিকাদার খায়রুল কবির রানা কাজ বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার লাইসেন্সে ঠিকাদার রনি এই কাজটি করার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক কাজ চলমান থাকায় দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার সুবিধার্থে পরে আমি কাজটি আবু শামাকে করতে বলি। আবু শামা কাজ শুরু করার পর উপজেলা প্রকৌশলী তাকে অহেতুক হয়রানি করতে থাকেন। একটি কাজ দেখার জন্য চার থেকে পাঁচজন করে ওয়ার্ক অ্যাসিস্টেন্ট পাঠান তিনি, প্রতিদিন এতগুলো লোকের অনারিয়াম দিয়ে কাজ করা কঠিন। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণীর ইট দেয়া শর্তেও তিনি ইট পছন্দ করেন না, এস্টিমেট অনুযায়ী আমরা যেভাবে কাজ করি সেটা ওনার পছন্দ না। উনি ওনার মনগড়া নিয়মে কাজ করে নিতে চান। এতে কাজ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি মূল ঠিকাদার দুইবার হাত বদলের কারণে কাজটি তিনি উঠাতে পারছেন না। ১৮ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার আবু শামা কাজটি শুরু করে কিছু না জানিয়েই আকস্মিক ১০ নভেম্বর কাজ বন্ধ করে দেন। এতে কাজের আনুমানিক পাঁচভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং আমার দফতর থেকে প্রধান ঠিকাদার খায়রুল কবির রানাকে চিঠি দেয়া হলেও তিনি এর জবাব দেননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা