বগুড়ায় আ’লীগ নেতাদের অঢেল সম্পদ, তৎপরতা নেই দুদকের
- আবুল কালাম আজাদ, বগুড়া অফিস
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের দায়েরকৃত মামলার আসামি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতারা এখনো অধরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। টানা সাড়ে ১৫ বছর এসব নেতাকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের)। হাসিনা সরকারের পতনের পর চার মাসে তাদের অবৈধ সম্পদের উৎসের সন্ধান যেমন হয়নি তেমনি দায়ের করা হয়নি কোনো মামলা।
বগুড়ায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন জেলা অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, সদর উপজেলা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সফিয়ান শফিক, তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজা আক্তার লিপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু। এর মধ্যে কারাগারে আটক অবস্থায় মারা গেছেন ঝুনু । জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মজনুসহ অপর নেতারা এখনো গ্রেফতার হননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু নেতাকর্মীদের কাছে পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ২০১৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, হাট-বাজার-ঘাটের ইজারা নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ দখলের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরপর সদর আসনে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি হয়ে যান টাকার কুমির। ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৩১ গুন বেশি। তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশন সম্পদ বিবরণীর যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে তিনি ছিলেন একজন কৃষি ও কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী। সে সময়ের তথ্য অনুযায়ী তার হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকে ছিল ৩১ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সদর আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দেয়া সম্পদের হিসাবে দেখা গেছে, তার মাসিক আয় ১১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে রয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ২০ লাখ টাকার একটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট, ১৫ বিঘা কৃষিজমি, ৮৫ শতাংশ অকৃষি জমি, ৯ একর মৎস্য খামার। ১১ বছর আগে তার স্ত্রী জোবাইদা আহসান জবার কোনো সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে তার ২০ ভরি সোনার গহনা রয়েছে। গত ৯ বছর আগে বগুড়া শহরে রিপুর নিজস্ব কোনো বাসাবাড়ি না থাকলেও এখন শহরের শিববাটিতে তার চার শতক জমির ওপর ৯ তলা আলিশান ভবন রয়েছে। তবে প্রকৃত সম্পদ হলফনামার চেয়ে আরো বেশি রয়েছে যা বিবরণীতে উল্লেখ নেই।
সম্প্রতি গ্রেফতার হত্যা মামলার অপর আসামি সদর উপজেলা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সফিয়ান শফিক এবং তার স্ত্রী মাহফুজা আক্তার লিপিও বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। শফিক দুই দফায় সদরের সাখারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তিনি টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য , ক্ষমতার অপব্যবহার এমনকি নিজে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দেয়াল পত্রিকার সাংবাদিক সেজে উপজেলা পরিষদ, নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সরকারী বিজ্ঞাপনের নামে লাখ লাখ টাকা বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া তিনি নিজের স্ত্রী লিপিকে জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচিত করে তার মাধ্যমেও জেলা পরিষদের বহু সম্পদ বাগিয়ে নেন। তাদের দুর্নীতির কথা এখন সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।
সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে মারা যাওয়া অপর নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনুও অগাধ সম্পদের মালিক। সরকার পতনের আগে স্কুলের অর্থে ক্রয় করা একটি মাইক্রোবাসও নিজের নামে লিখে নেন।
দুদক বগুড়া জেলা অফিসের পিপি বলেছেন, দূর্নীতির মাধ্যমে কেউ অবৈধ সম্পদ অর্জন করলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা