২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পাবনায় শিমের ভালো ফলনে লাভের আশা কৃষকের

পাবনায় শিমের ভালো ফলনে লাভের আশা কৃষকের -


যতদূর দু’চোখ যায়, মাঠের পর মাঠ শিম আর শিম। কৃষক পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই ক্ষেতে শিম পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাবনা সদর, আটঘড়িয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। মাঠে মাঠে এখন চলছে শিম তোলা ও বাজারজাতকরণের জন্য পরিচর্যা। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় চার হাজার হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে এক লাখ ২০০ টন।
আগাম জাতের শিম আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে আলহাজ উদ্দিনের। কিনেছেন জমি, হয়েছে নতুন ঘর। অভাব যেন পালিয়ে গেছে। পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের এই শিমচাষির সংসারের অবস্থা পাঁচ বছর আগেও এমন ছিল না। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল তার। বছর পাঁচেক আগে অন্যদেরকে আগাম জাতের শিম চাষ করতে দেখে তিনি তার বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে তার সংসারের চিত্র।
আটঘড়িয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের একাধিক চাষি জানান, শিমের জন্য বরাদ্দকৃত জমি ধান চাষের উপযোগী নয়। তাই বিকল্প হিসেবে অনেকেই শিমের আবাদ করছেন। আলহাজ উদ্দিনের মতো আগাম জাতের শিম চাষ করে ভাগ্য বদলিয়েছেন পাবনার অনেক শিমচাষি।
শীতের সবজি হলেও দুই মাস আগেই বাজারে উঠেছে শিম। অটো ও রুপবান নামে দুই রকমের শিমের বেশ চাহিদা বাজারে। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে পাঁচ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে গিয়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে শিম।
মণ্ডলপাড়ার তোফাজ্জল, ফকরুল, আতাই ও কামাল শিম ক্ষেতে মরা ফুল ও পোকা বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এবার তিন বিঘা করে শিম চাষ করেছেন। বীজ বপণ থেকে শুরু করে বাজারে শিম তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন, খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন।

শিম কেনাবেচার জন্য গ্রামে গ্রামে শিমের অস্থায়ী বাজার বসেছে। এসব বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন ও ট্রাকবোঝাই করে শিম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটবাজারে। খিদিরপুর গ্রামের পাইকারি শিম ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, এই এলাকার শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। এক মাস আগে থেকেই নতুন শিম পাঠানো শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারে শিমের দাম ও চাহিদা ভালো।
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শিমের আড়ৎ ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে সরেজমিন দেখা যায়, আড়তের পুরো জায়গায় ক্রয়কৃত শিম স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি স্তুপে শত শত মণ শিম। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় শিম রাখা হয়েছে। অন্যান্য এলাকার আড়ৎ সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসলেও মুলাডুলিতে আড়ৎ বসে সপ্তাহের সাতদিনই। মুলাডুলির আড়তগুলোতে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো: জামাল উদ্দিন জানান, শিমের ফলন বাড়াতে ও পোকামাকড় দমনে চাষিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানাভাবে চাষিদের পাশে থাকেন তারা। এবার বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামের কারণে পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষিরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement