২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তাড়াশে কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে অনুমোদনহীন ইটভাটা

প্রশাসন অভিযান চালালেও বন্ধ হয় না
উর্বর ফসলের ক্ষেতে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা : নয়া দিগন্ত -

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উর্বর কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষি ও পরিবেশের নানামাত্রিক ক্ষতির পরও বহাল তবিয়তে এসব ভাটার মালিকরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। পরিবেশ অধিদফতর বছরে দু’একবার অভিযান চালিয়ে কোনো কোনো ইটভাটা আংশিক ভেঙে বা আর্থিক জরিমানা করলেও অদৃশ্য কারণে তারা ফের পুরোদমে কাজ চালিয়ে যান। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তাদের এ খুঁটির জোর কোথায়?
ভাটার মালিকরা বলেন, তারা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করে রেখেছেন তারা। কিন্তু একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, এলআর ফান্ডই তাদের অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার মূল শক্তি। মাঝে মাঝে শুধু লোক দেখানো অভিযান হয়।

জানা গেছে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার তিন ইউনিয়নে মোট সাতটি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সাদিয়া ও এমএমবি’র পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র থাকলেও সেসব বিগত দুই বছর ধরে নবায়ন করা হয়নি। অন্য ইটভাটাগুলোর কোনো ছাড়পত্রই নেই। সাতটি ইটভাটার কোনোটিরই জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সই নেই। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সদ্য বদলিকৃত সহকারী পরিচালক মো: আব্দুল গফুর।
সরেজমিন দেখা যায়, ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উর্বর কৃষিতে এবং এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার পাশেই। স্কুল ও ক্লিনিক রয়েছে ইটভাটার পাশেই। বর্ষায় এসব ইটভাটায় উৎপাদিত সালফার চলনবিলের পানিতে মিশে মৎস্য প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয়- ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন’। গত ২০১৯ সালে এটি ফের সংশোধন করা হয়। এ আইনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া কেউ ইটভাটা স্থাপন কিংবা ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই ভাটা মালিকরা প্রকাশ্যে ইট প্রস্তুত অব্যাহত রাখছেন।

খালকুলা এলাকায় দু’টি ইটভাটা থেকে নির্গত সালফারের কারণে ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে তাড়াশ থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ কোনো ভাটা মালিককেই ধরছে না বলে অভিযোগ করেন মাটিয়ামালিপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম।
চলনবিল বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, ভাটা মালিকরা কোনো প্রকার আইনেরই তোয়াক্কা করেন না। প্রশাসনের নাকের ডোগায় তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও প্রশাসন তা দেখতে পায় না।
এ প্রসঙ্গে এস.এম ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী শাহ আলমের কাছে তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যকটি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে। তবে নবায়ন নেই। জেলা প্রশাসন নবায়ন করলেই আমরা তা করে নিবো। সরকারও রাজস্ব পাবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ভাটা মালিকদের এ দাবি সত্য নয়। ইটভাটার লাইসেন্স পাওয়ার প্রধান শর্ত পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এ ছাড়পত্র না থাকলে কাউকে লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement