২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি

ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী

আলটিমেটাম ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
-

কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করে রাখা বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া। রোববার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এম মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু, সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল গণি, বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিগত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আমি আমার বক্তব্যে অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল করেছি। সেই ভুলগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ভুলবশত শহীদ আবু সাঈদের ব্যাপারে কিছু কথা বলে ফেলেছি, এই ব্যাপারে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এই ব্যাপারে কারো মনে আঘাত লাগলে আমি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া আরো বলেন, শহীদ আবু সাঈদ আমাদের সন্তানের মতো। আবু সাঈদের শাহাদাতকে আমি সম্মান করি। আবু সাঈদ যদি শহীদ না হতেন, আজকে বাংলাদেশের এই পটপরিবর্তন হতো না। আমি মনে করি, আবু সাঈদ শহীদ হয়ে একটা রাস্তা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে চলছে, মানুষের কথা বলার অধিকার দিচ্ছে। তাই আবু সাঈদের শাহাদাতকে আমি সম্মান করি। তার এই আত্মত্যাগে আমরা যেন সমৃদ্ধির দিকে যেতে পারি, এই কামনা আমি করি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এম মাহবুব আলম ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্যে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়ার বক্তব্যের নিন্দা জানান এবং তার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে এ ব্যাপারে সবার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি ব্যবহারের কড়া সমালোচনা করে আবু সাঈদের শাহাদাত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার ও মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেন। এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে তার বাসভবনে বৈঠকে বসেন। জেলা প্রশাসক ১৬ ডিসেম্বর ঘটনায় ছাত্র নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বিতর্কিত ওই বক্তব্যের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়ার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান। এ পরিস্থিতিতে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া।


আরো সংবাদ



premium cement