ঐতিহাসিক ‘ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি’ জরাজীর্ণ
- মফিজুর রহমান হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি’ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে বাড়িটি। উপজেলার ঐতিহাসিক এই বাড়িটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে দিনে দিনে বাড়িটির সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পোদ্দারবাড়ির চতুর্থ পুরুষ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝিটকা অঞ্চলের বাল্লা ইউনিয়নে তৎকালীন ধনাঢ্য পরিবারখ্যাত পোদ্দার বাড়ির মূল কর্ণধার ছিলেন মহারাজ পোদ্দার। মহারাজ পোদ্দারের ছিল দুই সন্তান। রাম পোদ্দার ও আনন্দ মোহন পোদ্দার। এই আনন্দ মোহন পোদ্দারের ছিল তিন ছেলে। যোগেশ্বর পোদ্দার, সর্বেশ্বর পোদ্দার ও হরমোহন পোদ্দার। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সাত একর জায়গার ওপর ১৯ শতকের গোড়ার দিকে তিন সহোদর মিলেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি। বর্তমানে এটি ‘ঝিটকা পোদ্দারবাড়ি’ নামে পরিচিতি এবং উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
সাত একর জমির ওপর বাড়িটির দক্ষিণ ও উত্তর পাশে দু’টি বিশাল পুকুর। দক্ষিণ পাশের পুকুরটিতে গোসলের জন্য দৃষ্টিনন্দন শান বাঁধাই ঘাট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও বাড়িটির পূর্ব পাশে আছে দিগন্তজোড়া সবুজ শ্যামল ফসলের মাঠ।
বাড়ির আঙিনায় দক্ষিণে পুকুর পাড়ে রয়েছে বিশাল চৌচালা ঘর। ঘরটির চাল টিনের হলেও চারপাশের দেয়াল কাঠের। চারপাশের বারান্দাও কাঠের তৈরি। এই ঘরেই তৎকালীন সময়ে বিচার-সালিসের বৈঠক বসতো। এর উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে বিশাল আধাপাকা দৃষ্টিনন্দন দু’টি ঘর। ঘরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার কাঠ। সামনের অংশে রয়েছে নিপুণ হাতের কারুকাজ। এর পেছনের অংশে অর্থাৎ উত্তর পাশে আছে কারুকার্য খচিত একতলাবিশিষ্ট তিনটি প্রাসাদ। প্রতিটি প্রাসাদে চার-পাঁচটি করে বিশালকায় কক্ষ। এই প্রাসাদেই বসবাস করতেন পোদ্দার বাড়ির সদস্যরা। তবে সংস্কারের অভাবে বর্তমানে প্রাসাদগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরেরা স্বপরিবারে ভারতে চলে যায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার এই বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাক সরকার বাড়ির দক্ষিণের ঘরটিতে সার্কেল অফিস (রাজস্ব) করে, যা বর্তমানে বাল্লা ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে এই বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছিল। আগস্ট মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পোদ্দারবাড়ির পরিত্যক্ত যে ভবনগুলো রয়েছে সেগুলো সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীর সই-স্বাক্ষর নিয়ে একটি প্ল্যান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনসহ বরাদ্দ পেলেই এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা