১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিলেটে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি, আ’লীগ নেতাকে অপহরণ নিয়ে রহস্য

৭ দিনেও উদ্ধার হয়নি ছিনতাই হওয়া ৪২ লাখ টাকা
-

জমি ক্রয়ের জন্য গত ৯ ডিসেম্বর নগরীর তিনটি ব্যাংক থেকে ৪২ টাকা তুলে দুই সহোদর রুপায়েল ও হেলাল আহমদ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে শিবগঞ্জের বাসায় ফিরছিলেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে অস্ত্রের মুখে নগরীর শিবগঞ্জ ফরহাদ খার পুলের সামনে পৌঁছামাত্র ছয়টি মোটরসাইকেলে ছিনতাইকারিরা অটোরিকশা আটকিয়ে অস্ত্রের মুখে সেই টাকা ছিনিয়ে নেয়। আলোচিত এই ঘটনায় মামলা হলেও সাতদিনে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে নগরীর চৌহাট্টা এলাকা থেকে নয়া দিগন্তের সাবেক সিলেট ব্যুরো প্রধান ও সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি এনামুল হক জুবেরের মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও ফলাফল শূন্য।
শুধু ৪২ লাখ টাকা ছিনতাই কিংবা সিনিয়র সাংবাদিকের মোবাইল ছিনতাই নয়, সিলেট নগরীতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই। মাঝে মধ্যে দুয়েকজন ছিঁচকে চোর-ছিনতাইকারি আটক হলেও মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক মাসে সিলেট নগরীতে অর্ধশতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে জনমনে। সন্ধ্যারাতে বাসা-বাড়ির দরজা ভেঙে ঘটছে চুরির ঘটনা। চুরি হচ্ছে মোটরসাইকেল। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগই জিডি পর্যন্ত করছেন না।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে নগরীর সুবিদবাজার এলাকা থেকে অপহৃত হন জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যাসহ সাতটি মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। অপহরণের পর রাতেই তার পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী ওই চক্রটি। পরবর্তীতে ১৫ লাখ টাকায় তাকে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মল্লিক আহমদ চৌধুরীর কাছে সেই টাকা দেয়া হলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আহত অবস্থায় নগরীর সাগরদিঘীরপার এলাকায় রাস্তার পাশে অ্যাডভোকেট মিসবাহ সিরাজকে ফেলে যায় ওই চক্রটি। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে গভীর রাতে নগরীর সোবহানীঘাটের আল হারামাইন হাসপাতালে জরুরী অস্ত্রোপচার শেষে সকালে ফের আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এ ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে মিসবাহ সিরাজের পরিবার আইনের আশ্রয় না নিলেও ছায়াতদন্তে নেমেছে পুলিশ। 
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শেল্টারে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িতরা ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের নামধারী কতিপয় দুস্কৃতিকারীদের সাথে আঁতাত করে ফের পাড়া মহল্লায় ফিরে এসেছে তারা। ফলে নগরে চুরি ছিনতাই বাড়ছে। 


গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ১২ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মিয়ার কুয়ারপাড়ের ইঙ্গুলাল রোডের ৫২/২ নাম্বার বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও প্রাইজবন্ডসহ ৪/৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর চক্র।
একই দিন দুপুরে নগরীর সোনালী ব্যাংক আম্বরখানা করপোরেট শাখা থেকে বিদেশী টাকা এক্সচেঞ্জ করে রিকশায় আখালিয়ার বাসায় ফিরছিলেন এক নারী।  ব্যাংক থেকে কয়েকশ’ গজ যাওয়ার পর দর্শন দেউড়ি রাস্তার মুখে মোটরসাইকেলে আসা কয়েক যুবক তার টাকা ছিনতাইর চেষ্টা করে। সিএনজি অটোরিকশার কয়েকজন চালকের সহায়তায় ওই নারী রক্ষা পান। 
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা ও নিরাপত্তা দেয়াই পুলিশের কাজ। পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে অপরাধীদের গ্রেফতারও করছে। এরপরও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে আমাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
৪২ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, শিগগিরই এর সাথে জড়িতরা গ্রেফতার ও মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement