চিকিৎসক সঙ্কটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
- সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১১
চিকিৎসক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, অর্থসার্জারি ও চক্ষুসহ ১০ জন চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা ২০০ জন রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১২ জন। রয়েছে নার্সসহ অন্যান্য জনবল সঙ্কটও। ফলে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে বাড়ছে তাদের চিকিৎসা ব্যয়।
বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগ নিচ্ছে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। হাসপাতাল এলাকায় ঘুরে বেড়ানো দালালদের মাধ্যমে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ফলে চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, ১০০ শয্যার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দৈনিক গড়ে দুইশ’র বেশি রোগী ভর্তি থাকে। তাছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরো প্রায় দুই থেকে চারশ’ রোগী। অথচ জেলা সদরের এমন একটি হাসপাতাল চলছে তিনজন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মাত্র ১২ জন চিকিৎসক দিয়ে।
এখানে নেই কোনো সিনিয়র কনসালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আছেন শুধু একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট পেডিয়েট্রিক্স, ইএনটি ও গাইনি। রয়েছেন একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও), চারজন মেডিক্যাল অফিসার ও জরুরি বিভাগের জন্য রয়েছেন তিনজন মেডিক্যাল অফিসার। এ ছাড়া রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলোজি একজন, প্যাথলোজিস্ট একজন এবং মেডিক্যাল অফিসার আয়ুর্বেদিক (উন্নয়ন) একজন।
সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন, গাইনি, চক্ষু ও অ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, রেডিওলজিস্ট এবং প্যাথলোজিস্ট পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি কনসালটেন্ট না থাকায় এই হাসপাতালে বর্তমানে কোনো জরুরি অপারেশন করানো হচ্ছে না। একই সাথে মেডিক্যাল অফিসারের দু’টি পদ খালি আছে।
এ ছাড়া নার্সিং সুপারভাইজারের একটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পাঁচটি, মিডওয়াফ ছয়টি, সহকারী নার্স দুইটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) তিনটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) দুইটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) একটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ফিজিও) একটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) একটি, কার্ডিওগ্রাফার দুইটি, ডার্করুম সহকারীর একটি পদ খালি রয়েছে।
এদিকে সদর হাসপাতলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎস্যক সঙ্কটের সুযোগ নিচ্ছে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। দালালদের মাধ্যমে হাসপাতাল চত্বর থেকে তারা রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে অনেককে সর্বশান্ত করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার আব্দুস সালাম বলেন, শুন্য পদে ১০ জন চিকিৎসক, চারজন নার্স এবং অন্যান্য শুন্য পদে জনবল চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের দফতরে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মিত শতাধিক ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে বহু সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সল্পতার কারণে তাদেরকে কাঙ্খিত সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন একেবারেই বিমুখ হয়ে ফিরে না যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা