লবণ পানির প্রভাবে ৭ হাজার একর জমির চাষাবাদ অনিশ্চিত
- রফিক আহমদ চকরিয়া (কক্সবাজার)
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১০
কক্সবাজারের চকরিয়ার উপজেলার উপকূলীয় সাতটি ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার একর জমিতে বোরো ধান চাষসহ রকমারি সবজি উৎপাদনের একমাত্র মিঠা পানির উৎস হচ্ছে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহাল’। এ জলমহালটির স্লুইস গেট দিয়ে লবনাক্ত পানি ঢোকানোর ফলে বোরো ধানসহ শীতকালীন সবজি চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি আটকিয়ে প্রতি বছর উপকূলীয় সাত ইউনিনের প্রায় সাত হাজার একর জমিতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছেন এলাকার কৃষকরা। এক যুগ আগে জলমহালটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে জলমহালটি তিন বছরের জন্য লিজ দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়। এতে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও ইজারাদারেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাছ চাষের জন্য স্লুুইচ গেটের জলকপাট খুলে দিয়ে লবণ পানি প্রবেশ করায়। এতে জলমহালটি লবণ পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। ফলে উপজেলার সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা ও ভেওলা মানিক চর ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার একর জমিতে ধান চাষ ও রকমারি সবজি উৎপাদনে ব্যবহৃত মিঠা পানির উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকার প্রান্তিক চাষিদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহাল মাধ্যমে মিঠা পানি আটকিয়ে কৃষিকাজ। এ জলমহালে চিংড়ি উৎপাদনের স্বার্থে রাতের আঁধারে বদরখালী ও কোনাখালী অংশের কয়েকটি স্লুুইস গেটের জলকপাট খুলে দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকানো হচ্ছে। এতে জলমহালের ভাসমান কচুরিপানাও লবণাক্তের প্রভাবে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে সাতটি ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার একর জমিতে মিঠা পানির অভাবে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালটি মিঠা পানিতে মৎস্য চাষের শর্তে লিজ দেয়া হয়। কিন্তু সেই শর্তের তোয়াক্কা করেননি ইজারাদাররা। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও এ জলমহালটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রভাবশালীদের হাতে। তারাই স্লুইস গেটের কপাট খুলে দিয়ে রাতের আঁধারে এ জলমহালে অনায়াসে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি প্রবেশ করােেচ্ছ।
চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন চিরিঙ্গা ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) আবুল মনছুর জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনাখালী অংশের স্লুুইচ গেটের বেশিরভাগ জলকপাটের (দরজা) বেহাল অবস্থা। সংস্কারের অভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে ঢেমুশিয়া জলমহালে।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের পরিবারের স্বার্থ বিবেচনায় করে আগামীতে মিঠা পানির একমাত্র উৎস ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহাল লিজ প্রদান প্রথা বাতিলের আহ্বান জানান। পাশাপাশি স্লুুইচ গেটগুলোর টেকসই মেরামত এবং কঠোরভাবে নজরদারির আওতায় আনারও দাবি জানান।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, উপকূলের সাত ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালে লবণ পানির প্রবেশ করানো। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, সমুদ্র উপকূলের যত স্লুুইচ গেট রয়েছে তা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। যেসব স্লুুইচ গেটের জলকপাট ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে তা অতি দ্রুত মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা