ইসলামপুরে প্রক্সি-শিক্ষক দিয়ে চলছে যমুনা চরের প্রাইমারি স্কুল
- খাদেমুল বাবুল জামালপুর
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০১
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলগুলো চলছে প্রক্সি-শিক্ষক দিয়ে। অন্য দিকে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে মাসোয়ারার বিনিময়ে আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকদের চাকরি না করেও বেতন উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়াসহ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ১১টি স্কুলের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে স্কুলে রেখে দিয়েছেন প্রক্সি-শিক্ষক। সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানান, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ইসলামপুরে বসবাসরত শিক্ষকরা মাসের পর মাস স্কুলে অনুপস্থিত থাকছেন। কিন্তু বেতনভাতা উত্তোলন তাদের বন্ধ নেই। চরাঞ্চলের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষ সামান্য বেতনে প্রক্সি-শিক্ষক হিসেবে এসব স্কুলে কাজ করছেন।
চরাঞ্চলবাসী জানায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজম ও পুলিশের ডিবি প্রধান হারুনকে আব্দুল গফুর নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দিয়ে এলাকায় বেশ দাপট খাটাতেন। এই পরিচয়ে তিনি একাধিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বদলিও করেছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার টাকা। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
এ উপজেলায় বেতনভাতাহীন শতাধিক এবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। সেগুলো সরকারীকরণের কথা বলে এবং তথ্য আপডেট করে দেয়ার নামে গফুর খান শিক্ষকদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অপর দিকে চরাঞ্চলের কিছু শিক্ষককে টাকার বিনিময়ে ডেপুটেশন দেয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমেও তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে নানা প্রভাব খাটিয়ে গফুর খান কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন।
সরেজমিন চরাঞ্চলের চেঙ্গানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় এক যুবক (প্রক্সিশিক্ষক) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি গোপনে কেটে পড়েন। একই চিত্র দেখা যায় দিঘাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। জানা যায়, চেঙ্গানিয়া প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক শান্তানুর, উত্তর দিঘাইড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান, কাঁসারি ডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এন্তাজ আলী, জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমা আক্তার, সাপধরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, মন্নিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার এবং চরদিঘাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনজু মনোয়ারা প্রক্সি শিক্ষক রেখে বছরের পর বছর ঢাকায় ও জামালপুর শহরে বসবাস করছেন এবং সরকারি বেতন তুলছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে চলতি বার্ষিক পরীক্ষাও নিচ্ছেন প্রক্সি শিক্ষকরা।
জানা যায়, বিগত ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে গফুর খান ছিলেন নিজ হাতে নৌকায় সীল মারা প্রিজাইডিং অফিসারের মধ্যে শীর্ষে। যার উপহার হিসেবে একই উপজেলায় তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসার আব্দুল গফুর খান বলেন, এসব পাগলের কথা। অভিযোগ হয়েই থাকে। এতে আমি ভীত নই।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা