১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধুলো ধোঁয়া ও শব্দ দূষণে ব্যাহত পাঠদান, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

নলছিটিতে স্কুলের পাশে অনুমোদনহীন ইটভাটা
ধুলো ধোঁয়া ও শব্দ দূষণে ব্যাহত পাঠদান, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা -


ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই এলাকায় দু’টি স্কুলের পাশে গড়ে উঠেছে একটি অনুমোদনহীন ইটভাটা। এতে ধোঁয়ায় দূষণ তো চলছেই স্কুল ঘেঁষে বেপোরোয়াভাবে চলা ট্রলির শব্দে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কিছুই করতে পারছেন না তারা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০ গজ ও মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কয়েক মিনিট হাঁটা দূরত্বে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে রিয়াজ ব্রিকস নামে একটি ভাটা। ভাটায় কাঠের আগুনে ইট পোড়ানো হয়। আবার মাটি, জ্বালানি কাঠ ও ইট বোঝাই করে একের পর এক ট্রলি চলাচল করে। ফলে ধুলো, ধোঁয়ায় আছন্ন পুরো এলাকা। একই সাথে ট্রলি চলাচলের বিকট শব্দ। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।

পরিবশে আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে নলছিটিতে অবৈধভাবে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে এমন কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। আর নিবন্ধনবিহীন রিয়াজ ব্রিকস নামের ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ ও বিক্রীত ইট সরবরাহ করতে স্কুলের সড়কে বেপোরোয়াভাবে বিকট শব্দে চলছে ট্রলি। দিনব্যাপী চলা এসব ট্রলির শব্দে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসতে হচ্ছে তাদের।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন গেলে দেখা যায়, আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ও ঘনবসতি এলাকায় অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব কয়লার বিপরীতে কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অবৈধ ট্রলির মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমি ও নদীর চরের মাটি কেটে এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট।
সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরা আক্তারসহ কয়েক শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের পাশে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে অনেকের। স্কুলের সড়ক দিয়ে বোপোরোয়া গতিতে ট্রলি চলায় আতংকে চলাচলা করতে হয় বলে তারা অভিযোগ করে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু কনসালট্যান্ট ডা: ফয়সাল হাসান ভূঁইয়া জানান, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে অ্যাজমা ও অ্যালার্জি হয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়।
সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, স্কুলের পাশে ইটভাটা স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য সড়কে বেপরোয়া গতিতে ট্রলি চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে। ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। তবু লিখিত আকারে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন বলে তিনি আরো জানান।

এ বিষয় কৃষিবিদ ড. শাখাওয়াত হোসেন শরীফ জানান, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেয়া হয় না। ফসলি জমিতে ইটভাটা হলে কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৯ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না এমন আইন থাকলেও সেটা না মেনে ইটভাটা চালাচ্ছেন প্রভাবশালী ভাটা মালিক। স্কুল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠা করেছেন রিয়াজ ব্রিকস নামে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয় ইটভাটা মালিক কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ভাটা মালিক জানান, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো ম্যানেজ করেই চালানো হয়। প্রত্যেক ভাটা থেকে একটি মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, স্কুল সংলগ্ন ইটভাটা বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। বসতবাড়ি ও স্কুলের পাশে ইটভাটা স্থাপনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। সরেজমিন পরিদর্শনে এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement