শুকিয়ে যাচ্ছে পাবনার ১৬টি নদ-নদী, কর্মহীন জেলেরা
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
এই অগ্রহায়ণ মাসেই পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ১৬টি নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল এ জেলার প্রায় ১২ হাজার জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। নদ-নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষি খাত ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
১৯৬০’র দশকে পাবনা জেলার বিভিন্ন নৌরুটে বছরব্যাপী লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করত। এখন আর বছরব্যাপী নয়, বর্ষা মৌসুমের দুই-তিন মাস নৌপথের কিছুটা সচল থাকে মাত্র। নদীপথে যাতায়াত আগের মতো এখনো সুলভ। প্রতি লিটার জ্বালানীতে নৌপথে ২১৭ টন মালামাল এক কিলোমিটার পথ পরিবহন করা যায়। অথচ সড়ক পথে ডিজেল চালিত ট্রাকে এক লিটার জ্বালানীতে মাত্র এক টন মালামাল এক কিলোমিটার পথ পরিবহন করা যায়।
নিয়মিত নদী ড্রেজিং না করায় নৌপথ কমতে কমতে বর্তমানে তলানিতে এসে ঠেকেছে। জেলায় সারা বছর কতটুকু নৌপথ চালু থাকে তারও জরিপ করা হয় না। ১২ মাস পানি থাকে এমন নদী পদ্মা ও যমুনাতে বিশাল বিশাল চর জেগে ওঠায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় মালবাহী কার্গোগুলোকে।
পাবনা জেলার পূর্ব প্রান্তে যমুনা নদী ৮০ মাইল সীমান্ত রচনা করে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলাকে আলাদা করেছে। বর্তমানে চৈত্র মাসে যমুনায় বিশাল বিশাল চর ও বালিয়াড়ি জেগে ওঠছে। এ নদীতে বার মাস নৌযান চলাচল করতে পারলেও শুষ্ক মওসুমে বালুয়াড়ির কারণে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। নদীতে নাব্যতা থাকে না বলে স্থানে স্থানে ড্রেজিং করে নৌপথ সচল রাখতে হয়। বছরের সব সময় এ নদীপথে বড় বড় মালবাহী জাহাজ, লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করে।
ইছামতির ৩০ কিলোমিটার পথ বর্তমানে পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। আগে বেড়া থেকে ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ পর্যন্ত লঞ্চ সার্ভিস চালু ছিল। সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে আছে কেবল কাজীরহাট পাটুরিয়া নৌপথ। বড়াল, গুমানী ও চন্দ্রাবতীতে বর্ষাকালে মালবাহী নৌকা চলাচল করলেও অন্য সময়ে নদীতে পানি থাকে না।
পাবনা জেলার দক্ষিণ পশ্চিম সীমানায় পদ্মা নদীর ৮০ কিলোমিটার, পূর্ব দিকে যমুনা নদীর ২৫ কিলোমিটার, উত্তর দিকে হুড়াসাগর নদের আট কিলোমিটার এবং বড়াল নদের ২৫ কিলোমিটার নৌপথ কোনোমতে টিকে আছে। সামান্য নৌপথ রয়েছে গুমানী নদীতে। সুতিখালির পাঁচ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রত্নাই, আত্রাই, চিকনাই, চন্দ্রাবতী, কাগেশ্বরী, বাদাই ও ইছামতি নদীতে নৌপথ সচল না থাকায় এখন বর্ষাকালেও মাছ চাষ হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে হয় ফসলের আবাদ। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ করায় নদী পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সুযোগে জেলা প্রশাসন এসব নদী ইজারা দিয়ে অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে রুকনাই, বারনাই, ট্যাপাগাড়ী, গোহালা, শালিকা, শুটকিদহ ও ভাঙ্গুড়ার ইছামতি নদী। ইছামতি নদীতে ৫০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল। চিকনাই ৩৮ কিলোমিটার ও আত্রাই ৩০ কিলোমিটার। এখন এসব নৌপথ একেবারেই বন্ধ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা