ইজারার অর্থ যেত সাবেক এমপি ছেলুন ও তার ভাইয়ের পকেটে
- হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৩
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নয়মাইল ও দশমাইল নামক এলাকায় মাত্র এক মাইল দূরত্বের মধ্যে একই দিনে বসছে দু’টি পশুহাট। হাট দু’টি নিয়ে একদিকে যেমন তৈরি হয়েছে স্থানীয় কোন্দল, অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়কে দীর্ঘ যানযট। একটি হাট প্রশাসনের অনুমতিতে চললেও আরেকটির কোনো অনুমোদন নেই। নয়মাইল ভুলটিয়া বাজারের হাটটির পক্ষ থেকে সামান্য অর্থ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতরে জমা হলেও দশমাইল হাটের কোনো অর্থই সরকার পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ ও মামলার কৌশলের কারণে সে সময়েও হাট থেকে সরকারকে ফাঁকি দেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমানে হাটের নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন, সকলে মিলেই হাট দু’টি পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার দশমাইল বদরগঞ্জ বাজার ও নয়মাইল ভুলটিয়া বাজারে সপ্তাহে শনিবার বসছে দু’টি পশুহাট। রাস্তার পাশেই হাট দু’টোর অবস্থান এবং একই দিনে দু’টি হাট বসায় চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়কে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজটের। এলাকাবাসী বলছে, দুই হাট নিয়েই স্থানীয়দের মধ্যে পূর্ব থেকেই ছিল কোন্দল। ৫ আগস্টে পর হাটের নিয়ন্ত্রণকারীরা পরিবর্তন হলেও নতুনদের মধ্যেও রয়েছে দু’টি গ্রুপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার দশমাইল তথা বদরগঞ্জ বাজারে ১৯৫৩ সালে একটি গরুর হাট চালু করা হয়। তৎকালীন কিছু ধর্মপ্রাণ ও শিক্ষানুরাগী মানুষ জমি দিয়ে এ এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে আর্থিক উৎস হিসেবে হাটটি চালু করেন। এ হাটের জন্য গঠন করা হয় একটি ট্রাস্ট। বদরগঞ্জ কামিল মাদরাসা, পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ কামিল মাদরাসা, আলিয়ারপুর মসজিদ কবরস্থান, দশমী হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং, এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, সাধুহাটির একটি গার্লস স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাট থেকে উপার্জিত অর্থ সহায়তা করা হতো। তবে এ হাটের ওপর নজর পড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের। তাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এ হাটে তৈরি করা হয় স্থানীয় কোন্দল। হাট নিয়ন্ত্রণকারীদের দু’টি ভাগে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ কাজে লাগান সাবেক এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও তার ভাই টোটন জোয়ার্দ্দার।
২০১৯ সালে দশমাইল বাজার থেকে হাটটি সরিয়ে আনা হয় নয়মাইল বাজারে। তবে সে-সময় চুয়াডাঙ্গার দশমাইল বাজারে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকায় হাটটি সম্পূর্ণরূপে নয়মাইল বাজারে স্থানান্তরিত হয়নি, ফলে আগের স্থানেও বসে আংশিক হাট। তখন দু’টি গ্রুপই পৃথক হাট বসানো শুরু করে। চুয়াডাঙ্গার নয়মাইল ভুলটিয়া বাজারে ছেলনু-টোটনের নির্দেশনায় একটি পশুহাট এবং বদরগঞ্জে একটি হাট বসে। এতে এক দিকে যেমন বদরগঞ্জ এলাকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক উৎসের সঙ্কট দেখা দেয়, অন্যদিকে নয়মাইল ভুলটিয়া বাজারেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। আওয়ামী লীগের ক্যাডারখ্যাত কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিকের নেতৃত্বে ভুলটিয়া পশুহাট কিছুদিন চললেও ছেলুন-টোটনের পরিকল্পনায় মামলার ছক কষে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২০ সালে সদর উপজেলার হাসনহাটি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুর রহমানকে দিয়ে জমির মালিকানাসংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করানো হয়। মামলা হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে হাটটির ইজারা পদ্ধতি বাতিল করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ হাট থেকে বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো সরকারের। তবে মামলার ফাঁদে ফেলে হাটের ইজারা পদ্ধতি বন্ধ করে আনা হয় খাস কালেকশনে। খাস কালেকশন শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকারের রাজস্বে দেয়া হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থের ফাঁকি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, ইজারা হলে অন্তত বছরে দুই কোটি টাকার ডাক হতো। তবে সরকার পরিবর্তনের আগে আওয়ামী লীগের লোকজন বছরে মোট ১২ থেকে ১৭ লাখ টাকা মতো জমা দিতেন।
নাম না প্রকাশ করে হাটসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বদরগঞ্জ হাট থেকে আয়ের চারভাগের তিন ভাগই নিতেন ছেলুন ও টোটন। এরপরও হাটটি নয়মাইল বাজারে নিয়ে আসেন তারা। ওই হাটের প্রায় সব টাকাই ছেলুন-টোটনের পকেটে ঢুকত। দশমাইল হাটনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে অর্থ না পৌছায় সে জন্যই ছেলুন-টোটন এ পরিকল্পনা করেন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সাংসদ ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও তার ছোট ভাই চুয়াডাঙ্গা ও পৌরসভার সাবেক মেয়র টোটন জোয়ার্দ্দার পলাতক থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ বলেন, আমি সবেমাত্র কিছুদিন যোগদান করেছি। সেখানে গিয়ে দু’টি হাটের লোকজনের সাথেই কথা বলে একটা সমাধানে পৌঁছানো দ্রুত সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা