গৌরনদীর ক্লিনিকগুলোতে অনিয়মই যেন নিয়ম
লাইসেন্স নেই ১৬টির চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা- আরিফিন রিয়াদ গৌরনদী (বরিশাল)
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
বরিশালের গৌরনদীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দালালনির্ভর এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা।
জানা যায়, গৌরনদী উপজেলায় ৪৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই ১৬টির। সম্প্র্রতি বেজগাতি সুইজ হাসপাতালে কথিত দুই নার্সের হাতে নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতক মারা যাওয়ার ১৩ দিন পর প্রসূতিরও মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হওয়ায় কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ করেননি স্বজনরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, বেসরকারি ক্লিনিকের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক। সেইসাথে ১০ বেডের একটি ক্লিনিক অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গার দরকার পড়ে। সেইসাথে ওটি রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম, ওয়াশরুম, ইনস্ট্রুমেন্ট রুম, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমাণ রুম, অভ্যর্থনাকক্ষ, অফিস রুম, চেইনঞ্জিং রুম ও ভান্ডার রুমসহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তত ১৩টি রুম থাকতে হয়।
এ ছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (বিল্ডিং ৩ তলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হয়। ওটি রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধসমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন ও আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হয়। জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিনজন ডিউটি ডাক্তার, ছয়জন ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ১০-১৫টি ও গৌরনদী বন্দর রোড, টিএনটি মোড়, বেজগাতি, বাটাজোর হাট, সুন্দরদী, বাকাই হাট, হোসনাবাদ লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় ৪৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশে প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা ও প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই। দুই- তৃতীয়াংশের বেনামি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরই পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পোস্ট ওপারেটিভ রুম, ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবলও নেই। তার পরও এসব প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন পেয়েছে, নবায়নও হচ্ছে। আর এ সুবাদে উন্নত চিকিৎসা সেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা।
গৌরনদী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহামুদ হোসেন শরীফ মুহিত বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র সঠিক ও লাইসেন্স আছে তাদেরকেই আমরা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য করি। আমাদের সদস্যের বাইরে বাকি ১৬টির লাইসেন্স নেই।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মনিরুজ্জামান বলেন, সুইজ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করার সময় নবজাতক ও পরে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে। পরিদর্শনের সময় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা