১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

লালমনিরহাটে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে সারের দাম বৃদ্ধি

সার সঙ্কটে বিপাকে চাষিরা
-

কৃষিপ্রধান জেলা লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকার চলতি রবি মৌসুমে কৃত্রিম সারের সঙ্কট দেখিয়ে দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। দিন দিন জেলায় এ সঙ্কট আরো গভীর আকার ধারণ করেছে। ডিলার, সাব-ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার বিক্রি করছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানান, গত দুই মাসে বিসিআইসি কোন সার বরাদ্দ দেয়নি। বিএডিসি চলতি রবি মৌসুমে নভেম্বর মাসে জেলার সদর উপজেলা, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার জন্য টিএসপি এক হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন, ডিএপি তিন হাজার ৪১২ মেট্রিক টন ও এমওপি দুই হাজার ৭০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেন, যা ডিলারদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসে টিএসপি দুই হাজার ৭৯ মেট্রিক টন, ডিএপি তিন হাজার ৯১২ মেট্রিক টন ও এমওপি দুই হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন সার বিসিআইসি ও বিএডিসি বরাদ্দ দিয়েছে।
অধিদফতর আরো জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলতি ভরা রবি মৌসুমে পাঁচটি উপজেলায় রাসায়নিক সারের চাহিদা থেকে মজুদ কম, কিন্তু ঘাটতি ব্যাপক। এ জেলায় ইউরিয়ার চাহিদা- ৪২ হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন, মজুদ-২৭ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন, ঘাটতি ইউরিয়া-১৪ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন। টিএসপির চাহিদা-১৯ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন, মজুদ- ৯ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন, ঘাটতি টিএসপি- ১০ হাজার ১৯১ মেট্রিক টন। ডিএপির চাহিদা- ২২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, মজুদ ডিএপি- ১৫ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন, ঘাটতি ডিএপি- ৬ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। এমওপির চাহিদা- ২৬ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন, মজুদ এমওপি- ১০ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন ও ঘাটতি এমওপি- ১৬ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন।
জানা গেছে, বর্তমান সময় জেলাজুড়ে পুরোদমে এখন আলু, গম ও ভুট্টার বীজ বুনন কার্যক্রম চলছে। বীজ বুননের আগে জমি তৈরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে চাষিদের। সার সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন জেলার চাষিরা। অথচ বাংলাদেশ কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) নিয়োজিত ডিলাররা ইচ্ছাকৃতভাবে সারের মজুদ রেখে বাজারে সঙ্কট তৈরি করছেন। ডিলার, সাব-ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আলু, গম ও ভুট্টা চাষিদের কাছে ৩০০-৫০০ টাকা বেশি দামে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) এবং মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার বিক্রি করছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ওকড়াবাড়ি এলাকার কৃষক ওমর ফারুক বলেন, এখন আলু, গম ও ভুট্টার মৌসুম। এ সময়ে সার না পেলে ফসলের উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। অথচ ডিলাররা সঙ্কটের অজুহাতে সরাসরি সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। আর খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন।
সদর উপজেলায় গোকুন্ডা ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের কৃষক জব্বার হোসেন বলেন, সারের দাম বেশি নেয়ার পাশাপাশি অনেক ডিলার রসিদ দিচ্ছেন না। রসিদ চাইলে সার নেই বলে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি ডিলাররা রাফার গোডাউন থেকে সার তুলে গুদামজাত করে সঙ্কট তৈরি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, গত দুই মাসে বিসিআইসির সার আসেনি। যে পরিমাণ আসছে তা তাৎক্ষণিক ডিলারদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে মজুদ ঘাটতি থাকলেও মাঠপর্যায়ে সারের কোনো সঙ্কট নেই। কিছু অসাধু ডিলার বা ব্যক্তি ঘরে সার মজুদ রেখে সার সঙ্কটের গুজব সৃষ্টি করছে। এসব অসাধু ব্যক্তি ডিলারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ রকিব হায়দার বলেন, সারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি উপজেলায় জরিমানা করা হয়েছে। আমরা সারের বিষয়টি নজরে রাখছি। এতে কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে সার মজুদের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement