সাগরে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ হতাশ মিরসরাইয়ের জেলেরা
- এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরও কাক্সিক্ষত ইলিশ মিলছে না। দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর সাগরে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। এতেকরে এখানকার ২৯টি জেলেপাড়ার প্রায় পাঁচ হাজার জেলে পরিবারে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। বঙ্গোপসাগরের স্বন্দ্বীপ চ্যানেলের ডোমখালী ও সাহেরখালী ঘাট হয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ জেলে নিয়মিত মাছ ধরতে যান সাগরে।
সরেজমিন গিয়ে ডোমখালী ও সাহেরখালী ঘাটে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ বোট নিয়ে ফিরতে দেখা যায় জেলেদের। তবে তারা ছোট চিংড়ি, পোয়াসহ নানা সামুদ্রিক মাছ পেলেও অনেকের কপালেই জোটেনি রূপালী ইলিশ। জেলেরা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সাগরে মিষ্টি পানি ঢোকায় ইলিশ মাছ না পাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন। ডোমখালী ও সাহেরখালী এলাকা দেশের চারটি ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের একটি বলে এতদিন বিবেচিত হতো।
ডোমখালী জেলেপাড়ার নারায়ণ জলদাশ বলেন, ২২দিন পর নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু যে পরিমাণ মাছ পেয়েছি তাতে মজুরিও উঠবে না। ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এখন মাছ না পাওয়ায় কি করে নিজে চলব, কি করে ঋণ পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না।
স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে এ সময় দেশের অন্যান্য জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। অথচ এখানকার চিত্র তার উল্টো। দুই-তিন বছর আগেও বঙ্গপোসাগরের মিরসরাইয়ের সাহেরখালী, ডোমখালী, মঘাদিয়া, বামনসুন্দর, মুহুরীপ্রজেক্ট পয়েন্টের ইলিশ দিয়ে পুরো উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাঠানো হতো। এখন মাছ না পেয়ে জেলেরা এ পেশা ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। এই অঞ্চলে সাগর ঘেঁষে শিল্পনগর গড়ে ওঠা, সাগর থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন, চর জেগে ওঠা, ইলিশ প্রজননের পয়েন্ট দিয়ে জাহাজ চলাচল এর অন্যতম কারণ বলে জানান এখানকার জেলেরা।
সাগর থেকে ফেরা অভিলাস জলদাশ ও মন্টু জলদাশ বলেন, অন্যান্য জায়গায় জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গেলেও আমাদের এখানে কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক পাহরায় ছিল। নৌকা, জাল কেনা এবং মেরামতে অনেক ঋণ হয়ে গেছে আমাদের। নিষেধাজ্ঞার সময়ও এনজিওরা ঋণ মাফ করেনি। কী করব বুঝতে পারছি না।
মিরসরাই মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মিরসরাইয়ে ২০১৮ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩৪২ দশমিক এক টন। ২০১৯ সালে ১৯ দশমিক পাঁচ টন কমে দাঁড়ায় ৩২২ দশমিক ছয় টনে। ২০২১ সালে আহরণ হয় ২৫২ দশমিক তিন টন। ২০২২ সালে মাত্র ১৪৭ দশমিক চার টন, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১০৪ দশমিক ৯ টন কম। ২০২৩ সালে ইলিশ আহরণ হয়েছে মাত্র ১১৬ মেট্রিক টন।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মিরসরাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও এখানে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক। মাছ না পাওয়ার অন্যতম কারণ মাছ বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। এখানকার বর্তমান পরিবেশ মাছের বিচরণক্ষেত্রের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা