দোয়ারাবাজারে চেলা নদীতে বালু তোলায় দু’টি গ্রাম বিলীন
- সোহেল মিয়া দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
- ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে চেলা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী দুইটি গ্রাম। নদীর অব্যাহত ভাঙনে এলাকার আরো পাঁচটি গ্রামের আবাদি জমি, বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
নদীভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে বসতঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে নদীর পাড়ের শতাধিক মানুষ। সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহমান এই চেলা নদীর বালু মহাল বন্ধ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছে এলাকাবাসী।
গতকাল রোববার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, চেলা নদীর উত্তর পাড় সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলাম, আরব আলী, মনির হোসেন, আবদুস সালাম, সেলিম আহমদ, মন্তাজ আলীসহ অন্তত ৩০টি পরিবারের বসতঘর নদীভাঙনের বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার অনেকেই নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের বসতঘর নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। কেউ কেউ চলে যাওয়ার আয়োজন করছেন। তারা জানান, গত বছর নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ২০টি বাড়ি, একটি স্কুলঘর ও একটি কাস্টমস অফিস। সোনাপুর, দৌলতপুর, রহিমের পাড়া, সারপিন পাড়া গ্রামের অর্ধশত বসতঘরও পাশের গ্রামীণ সড়কের ওপর চলে গেছে।
পূর্বচাইরগাঁ গ্রামের শাহজাহান মিয়া জানান, দুই বছর আগে তার দুই একর জমিই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর নদীতে চলে গেছে তার শেষ সম্বল বসতবাড়িটিও। বর্তমানে তিনি অন্যের ভিটায় মাচা বেঁধে পরিবার নিয়ে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘নদীটায় যদি বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হয়, তাহলে আশপাশের কোনো গ্রামই থাকবে না।’ সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে আজ নদীটির এত বিদ্রোহ, এত বিক্ষোভ। এখন নদীটি আমাদের মতো অসহায় মানুষদের গিলে খাচ্ছে। ভেঙে দিচ্ছে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের জীবিকার নির্বাহের মাধ্যম। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচবার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। জমিজমা সবই খেয়ে ফেলেছে নদীটা। আমাদের দেখার কেউ নেই।
রহিমের পাড়া গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, এ বছর যদি বালুমহালের ইজারা বন্ধ না করা হয়, তাহলে আগামীতে চেলার পাড়ের চাইরগাঁও, পূর্বসোনাপুর, সোনাপুর, নাছিমপুর, দৌলতপুর, সারপিন নগর, রহিমের পাড়াসহ বাকি এলাকাগুলোও বিলীন হবে নদীতে। তিনি জানান, আমাদের দাবি অভিশপ্ত এই চেলা নদীর বালু মহাল ইজারা বন্ধ করে তীরবর্তী এলাকাগুলো রক্ষা করা হোক। এদিকে স্থানীয় সোনালী চেলা বিজিবি (সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি) সদস্যরা জানান, অনেক সময় নৌকার মাঝিরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করতে যায়। বিজিবি সদস্যদের দেখা মাত্রই তারা কেটে পড়ে।
নরসিংপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ জানান, চেলার পাড়ের মানুষদের রক্ষা করতে হলে আগে বালু মহালের ইজারা বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে, দেশের মানচিত্র থেকেই এলাকাটি হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, চেলা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে বসতভিটা বিলিন হচ্ছে এই সংবাদটি আগে জানা ছিল না। নদীর তীরবর্তী এলাকা রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা