২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আদমদীঘির শাওইল গ্রামে জমে উঠেছে উলের কম্বলের হাট

আদমদীঘির শাওইল গ্রামে কম্বলের হাট : নয়া দিগন্ত -

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শাওইল গ্রামের উলের কম্বলের হাট ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে শাওইলসহ তার আশপাশের তাঁত শিল্প। উত্তরবঙ্গের এই তাঁতিগোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছে তাঁত সংস্কৃতি। বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের শাওইল গ্রামটি আকারে ছোট। এ গ্রামে অনেক আগে থেকেই তাঁতি শ্রেণীর মানুষের বসবাস। আর তার ফলে শাওইল গ্রামে তখন থেকেই এক ভিন্নধর্মী হাট গড়ে ওঠে। যার মূল শীতের চাদর কম্বল উলের (উলেন) সুতা কেনাবেচা। পর্যায়ক্রমে এ হাটের প্রাচীনতা আর জনপ্রিয়তার জন্য এবং চাদর কম্বল মূলত এই হাটে বেচাকেনা হয় বলে এই হাটের নাম দিয়েছে মানুষ “শাওইল গ্রামের উলের চাদর কম্বল হাটের গ্রাম”।
প্রতি সপ্তাহে রোব ও বুধবার ভোর ৪টা থেকে শুরু হয়ে কেনাবেচা চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। তা ছাড়া এ হাট বসে প্রতিদিনই। এ হাটকে ঘিরে এলাকায় প্রায় ৫০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতি পল্লী। যখন শাওইলের হাট বসে তখন মনে হয় যেন মেলা বসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় সবসময় মুখরিত গ্রামের পথঘাট। এ হাটকে ঘিরে চলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীদের চাদর কম্বল আর সুতা কেনার প্রতিযোগিতা। হাটের চার পাশে ঘিরে শত শত ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, রিকশা-ভ্যানের উপস্থিতি। তাঁতের খটখট শব্দে আর সুতার বুননে মিশে আছে শাওইলসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। কারো রয়েছে নিজের তাঁত আবার কেউ শ্রম দিচ্ছে অন্যের তাঁতে। প্রযুক্তি দাপট তারপরও এই আদি শিল্প শাওইল গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ আঁকড়ে ধরে আছে। গ্রামজুড়ে একটানা তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত গ্রামের পরিবেশ, আর নারী-পুরুষসহ নানা পেশার মানুষের কর্মব্যস্ততা। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও ঘরে বসানো পরিপাটি তাঁতযন্ত্র দিনরাত চলছে। কোনোটা চাকাওয়ালা আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ কাঠ দিয়ে হাতের তৈরি।
শাওইল ছাড়াও দত্তবাড়িয়া, মঙ্গলপুর, দেলুগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় ৫০ গ্রামের চিত্র একই ধরনের। শাওইল গ্রামের আশপাশের ৫০ গ্রামে ১০ হাজারেরও বেশি তাঁতি পরিবার আছে আর এ শিল্পকে ঘিরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে। কেউ বংশ পরম্পরায় আবার কেউবা নতুন করে।
বিভিন্ন গার্মেন্টের সোয়েটারের সুতা প্রক্রিয়া করে তাঁতে বুনিয়ে তৈরি হয় কম্বল, চাদরসহ আনুষাঙ্গিক পণ্য। শীত শুরুর আগেই শাওইলসহ আশপাশের তাঁতিরা কম্বল, সুতার বড় চাদর, কম্বল, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে লেডিস চাদর, কম্বল, লুঙ্গি, গামছা ও তোয়ালেসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্র ও পোশাক তৈরি করেন।
শাওইল বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, জুয়েল আহম্মেদসহ অনেকেই জানান, শাওইল হাটে শুরুতে পাঁচটি দোকান থাকলেও এখন দোকান রয়েছে ছোট বড় মিলে প্রায় দেড় হাজার। আর তৈরি হয়েছে নতুন নতুন আধুনিক কারিগর। দিনে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরিতে নিয়োজিত এসব কর্মচারীর অধিকাংশ আশপাশের গ্রামের দরিদ্র মহিলা। শাওইলের চাদর আর কম্বল এ গ্রামকে ঘিরে হাজারো সম্ভাবনা থাকলেও তা সম্ভাবনার খাত হিসেবে কেউ দেখছে না। তাঁতিদের মাঝে সরকারি সুবিধা বাড়াতে পারলে গ্রামটি হতো একটি দৃষ্টান্তমূলক রফতানির ক্ষেত্র। এ দেশের শিল্প সৌন্দর্যেও এ ধারাকে বাঁচানো যায় ধ্বংসের হাত থেকে। প্রয়োজন কেবল একটু উদ্যোগ। আর তা পেলেই বেঁচে থাকবে এ দেশের তাঁতিশিল্প।


আরো সংবাদ



premium cement