হাওরের পানি শুকাতেই শুরু হয়েছে চর দখলের দ্বন্দ্ব
- আলি জামশেদ নিকলী (কিশোরগঞ্জ)
- ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে হাওরের পানি শুকিয়ে যেতেই শুরু হয়েছে চর দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব। চরের মালিক প্রকৃতপক্ষে সরকার হলেও বাস্তবে ক্ষমতাসীনরাই মালিক ও হর্তাকর্তা। লাল নিশান টাঙিয়ে চলে এখানকার চরের দখল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ পরবর্তী এবার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চর দখলের সীমাহীন অভিযোগ। দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকলেও বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব বেশি বলে বিএনপির কিছু নামধারী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধেই ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রসাশনের ভাষ্য, এটা ঘোড়াউত্রা নদীর অংশবিশেষ। এর মালিক সরকার। তাই জরিপ না হওয়া পর্যন্ত এটা সম্পূর্ণই ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুঃস্থ অসহায় বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত আইনে ডিসিআর মূলে যারা এক একর ভূমি ভোগ দখল করার নিয়ম; কিন্তু অসহায় না হয়েও ভোগ দখলে আছেন কয়েকগুণ বেশি। যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে বন্দোবস্ত আইন বাতিল হয়েছে। তবুও প্রসাশনের মৌলিক অনুমতি সাপেক্ষে ভোগ করছে এক একরই। তবে সুষ্ঠু বন্টন ও তদারকির অভাবে বোরোলিয়া মৌজায় দ্বন্দ্ব চরমে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০০/০১ অর্থ বছরে সরকারিভাবে দুঃস্থ, মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদের নদীর জেগে উঠা চরে এক একর কৃষি খাসজমি অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়। অনেকের জমি অনাবাদি থাকতেও দেখা গেছে দীর্ঘদিন। হামলা, মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে এই চর নিয়ে দফায় দফায়। আবাদের মৌসুম শুরু হলেই যুগে যুগে শুরু হয় ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্ব।
দীর্ঘ সময়ব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকায় চর নিয়ে দুর্নীতিবাজরা মাথাচাড়ায় বেপোরোয়া ছিল। নিকলী সদর এলাকার বোরলিয়া মৌজার মধ্যে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক একরের পরিবর্তে স্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের লোকেরাও বনে যান কয়েক একরের মালিক। অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই আবার দখল নিয়েছেন চরের বিপুল পরিমাণ জমিথ। নদী নিকু আইনে যারা পাওয়ার কথা ছিল চর, তাদের অধিকাংশই হয়েছে বঞ্চিত।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চরের দখল ছাড়তে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মৌসুম শুরুর সাথে সাথে এবার আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধাদের। এই বিষয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হাসান আলীর ছেলে মো: রেজাউল হাসান লিখিত অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় বরাবর। অনুলিপি প্রদান করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী এবং যুগ্ম মহাসচিব ময়মনসিংহ সাংগঠনিক বিভাগের হাবিব উন নবী খান সোহেল বরাবর। এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমসহ জেলা সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলামকেও কপি প্রেরণ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিতে হস্তক্ষেপ না করলেও গত ১ ডিসেম্বরে উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য ডা: কফিল উদ্দিন এই তিনজনের নির্দেশে আরো বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী রাজাকার স্লোগানে তাদেরকে খুন জখমের হুমকি প্রদর্শন করেন। বন্দোবস্তের জমিতে লাল নিশান টাঙিয়ে নেন বলে অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়াও গত ২০ নভেম্বর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবরেও একই অভিযোগ রুহু সর্দারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী সদর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলীও।
এ বিষয়ে বদরুল মোমেন মিঠুকে ৫ ডিসেম্বর বিকেলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক থানা বিএনপির সেক্রেটারি ও জেলা বিএনপির সদস্য কপিল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্থানীয় নেতৃত্বে নেই। আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বিষয়টি ডিল করেছেন বলে দাবি করেন।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া বলেন, আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি করার কারণে নিজেও বঞ্চিত ছিলাম। তবে নিয়ম অনুযায়ী ১ একরের স্থলে অনেকে আওয়ামী লীগ দাপটে ১৫ একর পর্যন্ত দখলে নিয়েছে। আমি এখানকার ভূমির দখল চাই না। অসহায় তারা ভোগ করুক, এটা চাই।
জেলার বিএনপি সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি দলীয়ভাবে এখনো কোনো অভিযোগের কপি পাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
নিকলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার জানান, জরিপ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। এটা ঘোড়াউত্রা নদীর অংশ বিশেষ। এই ভূমি সম্পূর্ণই ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে মোবাইল ফোনে বিকালে পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা