০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ যেন মরা খাল

পানিপ্রবাহ নেই
-


কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদে ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষিকাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এক সময়ের প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ হারিয়ে যাচ্ছে। যদিও গত কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের বেশিরভাগ অংশ খনন করা হলেও বর্তমানে পানি প্রবাহ না থাকায় এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে কৃষকরা বোরো মৌসুমে ক্ষেতে সেচ দিতে পারেন না। তাই ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের দু-পারের মানুষের দাবি দ্রুত নদ দু’টি গভীরভাবে খনন করে পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতুসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে এক কালের উত্তাল নদটি ছন্দ হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। হোসেনপুর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ও জামালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ পানির প্রবাহ না থাকায় এখন বিলীনের পথে। পানির প্রবাহ না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র, মৎস্যসম্পদ ও নানান জলজ প্রাণী। হাজারো জেলে পরিবার বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়াপারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ব্রহ্মপুত্রে শাখা নদীগুলোও এখন প্রভাবশালীদের ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই সংঘর্ষে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। ব্রহ্মপুত্রের খাসজমি ও বালু ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে নদীতীরবর্তী এলাকায় সামাজিক অসন্তোষ বেড়েইে চলছে।

অন্যদিকে হোসেনপুর উপজেলার চরজামাইল থেকে চর-পুমদি হয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিগত দিনে নরসুন্দা নদ গভীরভাবে খনন না করার কারণে ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ রক্ষা না করায় পানির প্রবাহ নেই। যে উদ্দেশ্য নিয়ে নরসুন্দা নদ খনন করা হয়েছিল তা ভেস্তে গেছে, মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
রামপুর বাজারসংলগ্ন নরসুন্দাপাড়ের ব্যবসায়ী সঞ্জীতচন্দ্র শীলসহ অনেকেই জানান, একসময় এ নরসুন্দা নদ দিয়ে আশুগঞ্জ, ভৈরব ও সুনামগঞ্জ থেকে বড় বড় নৌকা ও কার্গো মালামাল নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ও বরমী বাজার পর্যন্ত চলাচল করত। বর্তমানে এটি নাব্যতা হারিয়ে ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।
অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদেরপাড়ে খুরশিদ মহল গ্রামের মো: ওয়াদুদ মিয়া, কাঞ্চন মিয়াসহ অনেকেই জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সঙ্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ব্রহ্মপুত্রের দু’ধারের কৃষিজমিতে প্রতি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পেরে কৃষকেরা চলতি মওসুমে বোরো আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তাছাড়া ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙনরোধে কোনো কার্যকরী ও টেকসই ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্ষায় বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটের কারণে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নৌকাগুলোও চলতে পারে না। ফলে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক জল বৈচিত্র্য ধংস হয়ে যাওয়ায় প্রাণিকুলের ভারসাম্যও হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের দাবি ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ সরকারি উদ্যোগে পুনঃখনন করে নাব্যতা আগের মতো ফিরিয়ে আনা। আর তাতেই সুফল পাবে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement