০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

মনিরামপুরের সবজি থেকে ফায়দা লুটছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা

মনিরামপুরে ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন কৃষক গোলাম মোস্তফা : নয়া দিগন্ত -


যশোরের মনিরামপুরে কৃষকের উৎপাদিত সবজি কয়েকটি হাতবদলের পর ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়। এতে একদিকে কৃষক তার উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অপরদিকে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ফলে লাভের টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।
মাঠের কৃষক ও খুচরা বাজারের বিক্রেতা ও ভোক্তাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে আসে। ভোক্তাদের অনেকেই জানান, সবজি উৎপাদন অঞ্চলে সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্টপোষকতায় বিশেষ ন্যায্যমূল্যে বেচা-কেনার ব্যবস্থা নিলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব কমতে পারে। সেই সাথে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মনিরামপুর উপজেলার বেশিরভাগ জমি তলিয়ে গিয়েছিল। এ কারণে অধিকাংশ কৃষককেই দুইবার সবজি চাষ করতে হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৫৩৭ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছরে এ উপজেলায় এক হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বেগুন ১০১ হেক্টর, টমেটো ৩৫ হেক্টর, শিম ৯১, বাঁধাকপি ৮০, ফুলকপি ৫৩, পেঁপে ১১৬ হেক্টর ও পটল ১৫৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে কৃষকের উৎপাদিত সবজির লাভের বিরাট অংশ লুটে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গত মঙ্গলবার সবজি উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উপজেলার শাহপুর, হরিসপুর, হায়াতপুর এলাকায় গিয়ে কৃষক ও পাইকার ক্রেতাদের সাথে কথা হয়। এ সময় শিম চাষি গোলাম মোস্তফা, বেগুন, বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষি সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদ জানান, সবজি তুলে বড় মোকামে নিয়ে যাওয়ার আগেই বাজার শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় তাদের সবজি।

গোলাম মোস্তফা ও আব্দুর রশিদ বলেন, অনেক সময় টাকা না দিয়েই পাইকাররা সবজি নিয়ে যায়। তারা মোকাম থেকে সেই সবজি বিক্রি করে তাদের টাকা দেয়। ক্ষেত থেকে কিছুটা দূরেই রাজগঞ্জ-কুমিরা সড়ক। এ সড়কে ভোরেই চলে আসেন পাইকার ব্যবসায়ীরা। কৃষক শহিদুল জানান, তিনি নগদ টাকায় প্রতি কেজি শিম ৪০ টাকায় বিক্রি করেন। অথচ বাজারে সেই ভোক্তাকে কিনতে হয় ১০০ টাকায়। বেগুন (চায়না-৩), বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতি কেজি বেগুন ৪৩ টাকায় বিক্রি করেন। অন্যদিকে খুচরা বাজারে সেই বেগুন বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। পাইকার ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন বলেন, তারা মোকামে গিয়ে প্রতি কেজি এক থেকে দুই টাকা লাভে আড়তে দেন। তারপর আড়ৎ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে বাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রায় দ্বিগুন মূল্যে সেই সবজি চলে যায় ভোক্তাদের কাছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর খুচরা বাজারে কৃষকের উৎপাদিত প্রতি কেজি শিম ১০০ টাকায়, বেগুন ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
পৌর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন জানান, আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। আমরা সামান্য লাভে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করি।
যশোর অঞ্চলের ভোক্তাঅধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসমীম জানান, এ নিয়ে ব্যবসায়ীসহ কৃষকদের সাথে কথা হয়েছে। অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement