পলি জমে ভরাট হচ্ছে চলনবিল
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চলনবিলের তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন কমছে এ বিলের বিশালতা। বর্ষায় সাগরের মতো বিশাল জলরাশি বুকে নিয়ে ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে আবার শরতে শান্ত জলরাশির ওপর ছোপ ছোপ সাদা-সবুজ রঙের খেলা। হেমন্তে পাকা ধান আর সোঁদা মাটির গন্ধে ম-ম করে চারদিক। শীতে হলুদ আর সবুজের নিধুয়া পাথার। গ্রীষ্মে চলনবিলের রুপ রুক্ষ। যেকোনো ঋতুতে চলনবিলে মূল আকর্ষণ নৌকাভ্রমণ।
তবে হেমন্তে চলনবিল এক ভিন্ন জগৎ। তাই চলনবিলে নিরাপদে নৌকায় ভ্রমণ করার জন্য শরৎ ও হেমন্তই শ্রেষ্ঠ সময়। নৌকা ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতে পারেন চলনের স্বচ্ছ পানিতে। চাইলে মাঝিদের বলে রান্নার আয়োজন করতে পারেন নৌকায়। হেমন্তে জায়গায় জায়গায় দেখতে পাবেন ধান কাটা, দেখতে পাবেন সবুজ আর সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ কিংবা জেলেদের মাছ শিকার।
দেখতে পাবেন বিলের পানিতে ভাসছে শত শত পাখির ঝাঁক। এর মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, ভূতিহাঁস, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল পাখি। তবে বালিহাঁসের আধিক্য সবচেয়ে বেশি। এসব পাখি ছাড়াও সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, চিল, বাজপাখিসহ দেশীয় প্রজাতির নানা পাখি রয়েছে। অধিকাংশ পাখি পানিতে নানা কায়দায় শারীরিক কসরত করছে। কিছু পাখি লেজ দুলিয়ে পোকা খুঁটে খাচ্ছে। শিকার শেষে কিছু সাদা বক খুঁটিতে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে। কালের বিবর্তণে এসবের অনেকটাই এখন বিবর্ণ। বিলের তলদেশ পলি জমে ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এর বিশালতা।
‘ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’ বই থেকে জানা যায়, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, নওগাঁ জেলার রানীনগর, আত্রাই, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চল মিলে চলনবিলের অবস্থান ছিল। কিন্তু ১৯১৪ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের পর থেকে রেলপথের উত্তর ও পশ্চিম অংশকেই চলনবিল বলা হয়। এমএ হামিদ টি কে ১৯৬৭ সালে ‘চলনবিলের ইতিকথা’ বইতে লিখেছেন, তখন থেকে প্রায় ১৪০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮২৭ সালে জনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে চলনবিলের জলময় অংশের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গমাইলের ওপরে। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, তৎকালে বিলের আয়তন ছিল ১৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি জমে থাকত।
জানা যায়, গঠনকালে চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় এক হাজার আট বর্গকিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে (মূল বিলটি) আয়তন দাঁড়ায় ১৫ দশমিক নয় থেকে ৩১ কিলোমিটার।
চলনবিল বেড়াতে গেলে পরিচয় হবে কিছু দর্শনীয় স্থানের সাথে। দেখা পাবেন পাবনার চাটমোহরের শাহি মসজিদ, জগন্নাথমন্দির, বনওয়ারি নগর জমিদারবাড়ি, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দেখা যাবে হজরত শাহ সুফি জিন্দানি (র:) এর মাজার, রাধাগোবিন্দমন্দির, রশিকমন্দির, শিবমন্দির, বড় কুঞ্জবন দিঘি, উলিপুর দিঘি, মথুরা দিঘি, মাকরসন দিঘি। তাড়াশের কাছেপিঠে বিনসারা গ্রাম। সেখানে গিয়ে দেখা মিলবে কিংবদন্তি বেহুলা সুন্দরীর বাবা বাছো বানিয়া ওরফে সায় সওদাগরের ভিটা জিওন কুপ। এ ছাড়া নাটোরের গুরুদাসপুরে খুবজিপুর গ্রামে দেখা যাবে চলনবিল যাদুঘর। এখানে পাবেন চলনবিলের বিভিন্ন ঐতিহ্যময় জিনিসপত্র।