৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নোটিশ পৌঁছানোর আগেই ইজারা সম্পন্ন, ঠিকাদারদের ক্ষোভ

লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট
নোটিশ পৌঁছানোর আগেই ইজারা সম্পন্ন, ঠিকাদারদের ক্ষোভ -

কোনো প্রকার প্রচার প্রচারণা ও নোটিশ ছাড়াই অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট ইজারা দিয়েছে চাঁদপুর নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাট এলাকায় নোটিশ পৌঁছানোর আগেই ইজারার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গোপনে লঞ্চঘাট ইজারা দেয়াকে কেন্দ্র করে আগ্রহী ঠিকাদার ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি, স্বচ্ছতার সাথে উন্মুক্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঘাটটি ইজারা দিলে সরকারের স্বার্থ রক্ষা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট, ফেরীঘাট ও পার্কিং ইয়ার্ডের রাজস্ব আদায় নিয়ে পূর্বের ইজারাদারের সাথে দীর্ঘদিন থেকে একটি মামলা চলছিল (বিআইডব্লিউটিএ) বন্দর কর্তৃপক্ষের। চলতি মাসের ২৬ নভেম্বর মামলাটি নিষ্পত্তি করে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে রায় দেন আদালত। ২৭ নভেম্বর বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের কর্মকর্তা মো: বছির আলী খান স্বাক্ষরিত একটি স্পট কোটেশন নোটিশ জারি করা হয়। যাতে ২৮ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার মধ্যে মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট ইজারা প্রদানে টেন্ডার দাখিলের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা বাছির আলী খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে স্পট কোটেশনের বিষয়টি গোপন রেখে নিজদের পছন্দের লোককে ঘাটটি ইজারা দিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে আগ্রহী ঠিকাদার ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র লক্ষ্মীপুর অফিসের পরিবহন পরিদর্শক মো: আব্দুর রহমান বলেন, আমি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুপুরের দিকে নোটিশটি পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে বিলি করেছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এই নোটিশে দরপত্র প্রদানের সময় দুপুর সোয়া ১২টা, অথচ আমি নোটিশ পেয়েছি বেলা ১টায়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় রিপন হোসেন জানান, বেলা দেড়টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র টিআই আব্দুর রহমান আমাকে ডেকে নিয়ে এই নোটিশ দিয়েছেন। তার কাছেই শুনেছি লঞ্চঘাটটি ইজারা দেয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু জানি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু আদালতের রায় বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে এসেছে এবং ভ্যাকেন্ট করা হয়েছে, তাই ঘাটটি খালি পড়ে থাকার সুযোগ নেই। তবে নোটিশ জারি করে কমপক্ষে দু’একদিন সময় দিয়ে ইজারা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) লক্ষ্মীপুরের সভাপতি প্রফেসর জেড এম ফারুকী বলেন, যে বা যারা সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে এ ইজারা দিয়েছেন তারা অবশ্যই আইন ভঙ্গ করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) লক্ষ্মীপুরের সভাপতি মো: কামাল হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ রাতের আঁধারে ব্যক্তিবিশেষ ও নিজের পছন্দের লোককে গোপনে যে ইজারা দিয়েছেন এটা আইনসম্মত নয়। এতে সরকার অনেক রাজস্ব হারাবে। আমরা মনে করি দুদকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানতে চাইলে বাছির আলী খান জানান, লঞ্চঘাট ইজারা দেয়ার ব্যাপারে আমরা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছি। আমাদের জনবল কম, তাই সবার কাছে খবর পৌঁছেনি। ঘাট এলাকায় নোটিশ না ঝুলানো, তড়িঘড়ি করে টেন্ডার, নিজের পছন্দের লোককে কাজ দেয়া ও ঠিকাদারদের ক্ষোভ এবং কোথায় কিভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।


আরো সংবাদ



premium cement