দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা, তালায় ইরি-বোরো চাষে অনিশ্চয়তা
- ইয়াছীন আলী সরদার তালা (সাতক্ষীরা)
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ইরি-বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের টানা বর্ষণ ও বেতনা নদীর পানির চাপে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং যশোরের কেশবপুর এলাকা থেকে নেমে আসা পানি নিষ্কাষণ হতে না পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, তালা উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসলিজমি তলিয়ে গেছে পানিতে। উপজেলার ধনদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, কুমিরা ও খলিশখালি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর ফসলিজমি এখনো পানির নিচে। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের অবৈধ নেটপাটা অপসারণ ও স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে খাল প্রশস্তকরণে কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া, নদী ও খালের পানিপ্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নদীর পানিপ্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে এই কমিটিগুলো কাজ করবে।
গত দুই সপ্তাহে উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য শুভাষিনী-শিরাশুনি থেকে নওয়াপাড়া ও জিয়ালা-নলতা পর্যন্ত খালে থাকা অবৈধ নেটপাটা অপসারণ করা হয়েছে। দলুয়া-শালিখা নদীতেও একইভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের কাজে সহযোগিতা করছেন। অভিযান শেষে ভুক্তভোগীদের নিয়ে দলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ মো: রাসেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খলিষখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাব্বির হোসেন, সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ মাসুদসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের এসব উদ্যোগের পরও পানি নিষ্কাষণ সন্তোষজনক অবস্থায় নেই।
শাঁকদাহ গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, অতিবৃষ্টিতে এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে মৎস্য ঘের, ফসলিজমি, সবজি ক্ষেত। এ পানি কবে সরবে, আর আমরা কবেনাগাদ ইরি-বোরোর চাষ করতে পারব জানি না।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রুমা বলেন, এ মৌসুমে ১৯ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়তে পারে। কারণ, এখনো অনেক জমি পানিতে ডুবে আছে। সেখানে নিষ্কাষণের কাজ চলছে। আমাদের ধান রোপণের উপযোগী হওয়ার জন্য এখনো দুই মাস সময় আছে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, এ বছর অতিবৃষ্টি এবং এলাকার নদ-নদী ও খাল-বিলে অবৈধভাবে নেটপাটা দিয়ে পানি প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এক শ্রেণীর মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো: রাসেল বলেন, এলাকার মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষের কারণে উপজেলার সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। শীত আসি আসি করছে অথচ হাজারো মানুষ এখনো জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের আকুতির কথা বিবেচনায় নিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য রাতদিন কাজ করা হচ্ছে।