তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যায়
- রাজশাহী ব্যুরো
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ধুমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ে রাজশাহীতে সাংবাদিকদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা করেছে বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশন। গতকাল শুক্রবার রাজশাহী নগরীর একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (হু) দেয়া তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়, তামাকজাত দ্রব্য ও ধুমপানের কারণে প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আর একই কারণে বছরে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এতে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা ধুমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন।
কর্মশালায় বলা হয়, তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্রতিকার পেতে বিভিন্ন ধরনের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য উন্মুক্তস্থানে ধুমপান না করা, ধুমপান এবং তামাকদ্রব্য কেনা-বেচায় ও উৎপাদনে আইনের কঠোর প্রয়োগ, পরিবারের সদস্যদের সাথে ধুমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কাউন্সিলিং, ধুমপান ছাড়তে উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরস্কৃত করা, তামাকজাতীয় দ্রব্যের ওপর অধিকহারে করারোপ করা, মিডিয়ায় ধারাবাহিকভাবে তামাক এবং ধুমপান বিরোধী সংবাদ ও লেখা তুলে ধরা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশনের খন্দকার আবেদুল ইসলাম। কর্মশালাটি পরিচালনা এবং ফেসিলিটেশন করেন বিশিষ্ট কনসালটেন্ট শুভাশীষ চন্দ্র মহন্ত ও রোগতত্ত্ববিদ সামসুল ইসলাম। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুহা: আব্দুল আউয়াল ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রাজশাহী প্রতিনিধি মঞ্জুয়ারা খাতুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খন্দকার মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান ও বিবিএম’র তারেক মাহমুদ।
এতে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশনের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, হু-এর তথ্য মতে, প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ২০২২ সালের এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ২৮.৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের হার ৪৭.৭ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ধূমপানের হার ৮.৭ শতাংশ। ধূমপানের কারণে মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে ধূমপানের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পুরুষদের মৃত্যু হার ২০.৮ শতাংশ এবং নারীদের মৃত্যু হার ০.৯ শতাংশ।
ধুমপান ছাড়তে এবং ক্ষতি কমাতে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর নির্দেশিকা বা গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১.২৫ বিলিয়ন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ তামাকের নেশা ছাড়তে চায়। আর ৭০ শতাংশ মানুষ এই বিষয়ে কোনো স্বাস্থ্য পরিষেবা বা অন্য সাহায্য পান না। হু-র এক চিকিৎসক বলেছেন, ধূমপান ত্যাগ করার সংগ্রাম অপরিসীম। আমাদের বুঝতে হবে যে, এটা করতে শক্তি লাগে এবং এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে কষ্ট সহ্য করতে হয়।
আচরণগত সহায়তার সাথে ওষুধের সংমিশ্রণ সফলভাবে ধূমপান ত্যাগ করার সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। ডব্লিউএইচও তামাক ছাড়ার কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে ভেরেনিক্লিন, নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এনআরটি), বুপ্রোপিয়ন এবং সাইটিসিনের মতো ওষুধের সুপারিশ করেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে নিকোটিন গাম এবং প্যাচ প্রথম হু-অনুমোদিত এনআরটি পণ্য হয়ে ওঠে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত কাউন্সেলিং (৩০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট) এবং আরো নিবিড় আচরণগত সহায়তা যেমন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা ফোন কাউন্সেলিংয়ের সুপারিশ করেছে।