জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লবই মনে করেন না ববি ভিসি
অভিযোগ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের- ববি প্রতিনিধি
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ভিসি ড. শুচিতা শরমিন জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী দেশের সব খাতে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ভিসি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ঘটনাবলির ওপর ভিত্তি করে এমন অভিযোগ করছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি যোগদানের পর প্রাথমিক শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সাথে কোনো ধরনের মতবিনিময় সভা করেননি। জুলাই বিপ্লবে সর্বপ্রথম স্বাধীন ক্যাম্পাস হিসেবে স্বীকৃত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেই দিনগুলোতে আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের খোঁজ খবর বা তাদের থেকে সেইদিনগুলোর অভিজ্ঞতা শোনার বা মতবিনিময় করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তনের ধারায় নিয়োগ পাওয়া এই ভিসি।
৫ আগস্টের পর প্রসাশনের কাছে শিক্ষার্থীদের ২২ দফা দাবি পেশ করা হলেও সেগুলো নিয়ে তার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না এবং এসব বিষয় নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনাও করছেন না বলে জানায় তারা। তাদের দাবিগুলোর এভাবে অবমূল্যায়নকে জুলাই বিপ্লবী চেতনার পরিপন্থী হিসেবেই দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা আরো জানান, নিয়োগপ্রাপ্তির দুই মাস হলেও এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমগুলোতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্ণধারের কাছ থেকে, বরং ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যাকারী স্বৈরাচার সরকারের নামে বিদ্যমান হল এবং স্বৈরাচারের দোসরদের নামে এখনো বিভিন্ন স্থাপনার নাম বলবৎ থাকলেও যোগদানের দুইমাসেও একটি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করে সেগুলোর পরিবর্তন করতে করেননি ভিসি। এ ছাড়াও তিনি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন যা জুলাই বিপ্লবী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তার মধ্যে আওয়ামী সরকারের দোষরদের অনিয়মতান্ত্রিক ডিন নিয়োগ, বিতর্কিত ব্যক্তি কলিমুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
এ ছাড়াও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান বিজয় ২৪ আয়োজিত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদের স্মরণে ‘স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। টুর্নামেন্টটি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হলেও তার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একবারও শহীদদের স্মরণ করেননি। এমনকি তাদের নিয়ে কোনো কথাই বলেননি এমনটিই অভিযোগ করছেন সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তার বক্তব্যের একটি রেকর্ডও আসে এই প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা আফসানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন কোথাও রাখতে চাই না। অথচ এতদিন পরেও আমাদের ঘাড়েই রয়েছে স্বৈরাচারের নাম। হলের নাম প্রস্তাব করা সত্ত্বেও এখনো হলের নাম পরিবর্তন হয়নি। নতুন ছেলেমেয়েরা পুরনো নামে হলে উঠবে। ভিসি ম্যামকে বলা সত্ত্বেও তিনি এখনো এর কোনো পদক্ষেপ নেননি। যা খুবই হতাশা ও দুঃখজনক।
ভিসি জুলাই বিপ্লবকে কতোটা ধারণ করেন তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আন্দোলনে গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, যেহেতু ভিসির আগমনটাই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে কেন্দ্র করে হয়েছে। তাই বিপ্লবের এই চেতনাকে ধারণ ও যথাযথ সংরক্ষণ করা তার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তার যোগদানের দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের যে স্পিরিট ও প্রত্যাশা তা শূন্যের কোটায়। আন্দোলনের শহীদরা আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। যে মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাদের মহৎ ত্যাগ-বিসর্জন, তা আমরা কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে-দিব না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা