পাটগ্রামে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে চড়া মূল্যে সার বিক্রি
নওয়াপাড়া, নগরবাড়ি, বাঘাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সারের বিশাল সিন্ডিকেট পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে- আমিনুর রহমান বাবুল পাটগ্রাম (লালমনিরহাট)
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভুট্টা, ইরিবোরো ও তামাকের ভর মৌসুমে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে চড়া দামে নিয়ে আসায় তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ভুট্টা ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, তামাক চার হাজার ৫০০ ও ইরিবোরো চার হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস ভুট্টা চাষাবাদের পিক সময়। আমন ধান ওঠার পরই কৃষকরা জমিতে ভুট্টা এবং তামাক চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভুট্টা রোপণের পর কৃষকরা আবার উৎপাদনকৃত তামাক বাজারে বিক্রি করে ওই জমিতে ইরিবোরো চাষাবাদ করবেন। এক সাথে এই তিনটি মৌসুমী ফসলের পিক সময় চলার ফলে প্রতি বছরই এ সময়ে সারের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, গত অক্টোবর মাসে টিএসপি ৭৫০ মেট্রিকটন চাহিদার বিপরীতে ২৮০ মেট্রিকটন ডিএপি ৭০০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ৫০০ মেট্রিকটন পটাশ (এমওপি) ১০০০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ২০০ মেট্রিকটন সরবরাহ করা হয়। চলতি নভেম্বরে টিএসপি ৬৫০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ৩৩৯ মেট্রিকটন ডিএপি ৬০০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ৬০০ মেট্রিকটন এবং পটাশ ৯০০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ৪০৯ মেট্রিকটন সরবরাহ করা হয়। তথ্যানুযায়ী বাজারে টিএসপি এবং পটাশের কিকুটা সঙ্কট থাকলেও ডিএপির তেমন কোন সঙ্কট নেই।
বাজার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানে সারের পর্যাপ্ত মওজুদ, কিন্তু দাম চড়া। এক বস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এক হাজার ৩৫০ টাকার স্থলে এক হাজার ৮০০ টাকা, ডিএপি এক হাজার ৫০ টাকার স্থলে এক হাজার ৩৫০ টাকা এবং পটাশ এক হাজার টাকার স্থলে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
একজন খুচরা সার ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত ২৪ নভেম্বর পাবনার বেড়া থেকে এক বস্তা টিএসপি (৫০ কেজি) এক হাজার ৭৫০ টাকা দরে কিনে এনেছেন। এতে এক ট্রাক (৩০০ বস্তা) সার কিনতে তার লেগেছে পাঁচ লাখ পঁচিশ হাজার টাকা। আর জামালপুরের তারাকান্দি থেকে তিনি ডিএপি কিনেছেন এক হাজার ২৮০ টাকা দরে। তিনি দাবি করেন, ওই টিএসপি তিনি স্থানীয় বাজারে এক হাজার ৭৮০ টাকা দরে এবং ডিএপি ১৩৩০ টাকা থেকে ১৩৫০ টাকা দরে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। তার বক্তব্য এবং দাবি অনুযায়ী তিনি এক বস্তা টিএসপিতে লাভ করছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা। তবে সরকার কর্তৃক যে নির্ধারিত মূল্য বেঁধে দেয়া হয়েছে তার থেকে কৃষকের কাছ থেকে এক বস্তা টিএসপিতে বেশি নিচ্ছেন ৪৩০ টাকা, ডিএপিতে ৩০০ এবং পটাশে ২০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, নওয়াপাড়া, নগরবাড়ি, বাঘাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সারের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট সারের পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তারাই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, পাটগ্রামে বিসিআইসির ৯ জন এবং বিএডিসির ৯ জন ডিলার রয়েছে। গত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত দুই হাজার ৭৫০ মেট্রিকটন টিএসপি, দুই হাজার ৫০০ মেট্রিকটন ডিএপি এবং চার হাজার ৩০০ মেট্রিকটন পটাশের চাহিদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই চাহিদার অনেক বেশি প্রয়োজন। কৃষকদের কথা মাথায় রেখে সরকারকে দ্রুত সারের চাহিদা পূরণ করতে হবে।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার সারের কিছুটা সঙ্কট রয়েছে স্বীকার করে এ বিষয়ে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের কাছে সার সরবরাহে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বদ্ধপরিকর।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাজারে সারের দাম কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি যাতে আগামী ডিসেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত সার দ্রুত আনা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা