২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আলুবীজ সঙ্কটে বিপাকে পাকুন্দিয়ার হাজারো চাষি

পাকুন্দিয়ার চরফরাদী ইউনিয়নে আগাম জাতের আলুক্ষেত : নয়া দিগন্ত -

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আলুবীজের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও আলুবীজ কিনতে পারছেন না কৃষক। কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের আলুবীজের দাম বৃদ্ধি ও সঙ্কট দেখা দেয়ায় উপজেলার হাজারো কৃষক বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। এতে আলুর উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে নতুন মৌসুমে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম অনেক বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অন্য দেশ থেকে আলু আমদানি করলে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।
সরেজমিনে পৌর সদরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালো জাতের বক্স আলু সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না। যারা পাচ্ছেন তারা কয়েক গুণ বেশি দামে ক্রয় করছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিকৃত (বীজ সংরক্ষণ) আলুবীজ (৫০ কেজি) প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকায়, গত বছর যার দাম ছিল ৮-১০ হাজার টাকা, ডায়মন্ড জাতের আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৫০০-৫০০০ টাকা। বিগত বছর দাম ছিল ২৭০০-৩০০০ টাকা। বগুড়া লাল আলুবীজ ৩৫০০-৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ,যা গত বছর ছিল ২০০০-২৫০০ টাকা। এ ছাড়া কৃষিতে ব্যবহৃত সব ধরনের সার ও কীটনাশক বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই দিন দিন আলুর আবাদ বাড়ছে। পৌর সদরসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই কম বেশি আলুর আবাদ হয়। আমন ধান কাটার পর পরই আলু আবাদে কৃষক জমিতে কাজ শুরু করেন। আলুবীজ বপনের পূর্বে জমিতে প্রচুর সার ব্যবহার করতে হয়। এ উপজেলায় বছরে ১৩২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়, যা থেকে প্রায় ২৬ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত আলু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হয়।

এ অঞ্চলের কৃষকরা ডায়মন্ড জাতের আলুর আবাদ বেশি করেন। বগুড়া লাল গুটি জাতের আলুর আবাদও হয়। এ ছাড়া আগাম জাতের আলু বারি-৭২ ও স্পিড জাতের আলুর আবাদ হয়। আগাম আলু ৬০-৬৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা জমিতে ১০০-১২০ মণ আলু উৎপাদন হয়। এখানকার কৃষকরা বীজআলুর আবাদও করেন।এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৩টি কোল্ড স্টোর রয়েছে।
উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের আলু চাষি মুছলেহ উদ্দীন জানান, এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করছেন। অস্বাভাবিকভাবে বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। আলু চাষের জন্য সার, কীটনাশক চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেরে যাবে। ফলনের পর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন এ চাষি।
বিএডিসির ডিলার এরফান উদ্দীন জানান, ভালো মানের বীজের সঙ্কট রয়েছে। আগের বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়তি দাম দিয়েও বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি সব ধরনের বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর - ই- আলম জানান, উপজেলা প্রশাসন আলুবীজ নিয়ে কারসাজি রোধে কাজ করছে। এ জন্য কৃষকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোথাও আলুবীজের অতিরিক্ত দাম চাওয়া হলে, উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement