চিলমারীর মিনারা হারতে জানেন না
কব্জিতে কলম চেপে লিখে তিনি পড়ছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে- রশিদ আনছারী চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬
শারীরিক প্রতিবন্ধী মিনারা হারতে জানেন না। হাত নেই তার, তাকে কী? কব্জিতে কলম চেপে তিনি পড়ালেখা করছেন রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের এই মিনারা খাতুনকে জীবনের কোনো বাধাই থামাতে পারেনি। জন্মের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মা মর্জিনা বেগমকে হারান তিনি। এরপর বাবা রফিকুল ইসলাম বিয়ে করেন অন্যত্র। সংসারে আসেন নতুন মা।
গরিব বাবা দিন মজুরি করে সংসার চালান। ‘দিন আনে দিন খায়, নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়’- এমন অবস্থা তার সংসারে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দিশেহারা পরিবারে বেড়ে ওঠা মিনারা খাতুন দাদীর আদর যতে্ন বড় হতে থাকেন। ছোট বেলা থেকেই পাশে থাকা দাদী বুঝতে পারেন প্রতিবন্ধী হলে কী হবে, মিনারার মেধা আছে। তিনি মিনারাকে বাড়ির সন্নিকটে কে ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। শুরু হয় মিনারার স্বপ্ন জয়ের সিঁড়ি বাওয়া। ক্লাসের পর ক্লাস বেয়ে বেয়ে তিনি ওপরে উঠতে থাকেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে আটকাতে পারেনি। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট। জন্মের পর থেকে তার দুই হাতের কব্জি বাঁকা। হাতের আঙুল নেই। কিন্তু থেমে যাননি তিনি। ক্লাসের পর ক্লাস পার হয়ে অবশেষে তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
মিনারার পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক শিক্ষকই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। তার জীবনের প্রথম প্রাইভেট বিনা টাকায় পড়িয়েছেন এলাকার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ওয়াহেদ আলী। কে ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মিনারা পঞ্চম শ্রেণী পাস করেন। দাখিল পাস করেন কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে। প্রাপ্ত জিপিএ-৪.৬৯। এইচএসসি পাস করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে। প্রাপ্ত জিপিএ-৪.৩৩। বর্তমানে তিনি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। রংপুরে মিনারার চাচা শফিকুল ইসলামের বিনদপুরের বাড়ি থেকে লেখাপড়া করছেন তিনি। বিনদপুর থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। এই পথ তিনি কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বা অটোতে চেপে যাতায়াত করেন।
অভাবের কারণে খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখা করছেন মিনারা। তার দরিদ্র বাবা ও চাচা মিনারার বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মিনারার বাবা-চাচা সবার কাছে দোয়া চান। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের মেয়ে যেন দেশের অবহেলিত মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন। কেউ যদি মিনারার শিক্ষা গ্রহণে আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান, তার বাবা সেটি কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করবেন। দাঁড়াবেন কি কেউ মিনারার পাশে? হয়তো আপনার সহযোগিতা মিনারার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আরো কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা