২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হকারদের দুর্দশার খবর রয়ে যায় অগোচরে

হকারদের দুর্দশার খবর রয়ে যায় অগোচরে -

‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে’। হ্যাঁ নিত্যদিন অসংখ্য খবরের কাগজ বগলদাবা করে কত না সুখ, দুঃখের খবরে ভরা পত্রিকা ঘরে ঘরে বিলি করা হকারদের সুখ-দুঃখের খোঁজ কেউ রাখে না। বছরের পর বছর রোদ, বৃষ্টি কিংবা হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে সময় মত নীরবে পত্রিকা পৌঁছে দিতে হয় পত্রিকা হকারদের। সীমিত আয়ের অর্থ দিয়ে স্ত্রী, সন্তান আর সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাদের জীবনের পথচলায় সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার কত খবরের কাগজ পৌঁছে দেন শহর, নগর,বন্দর, কিংবা কোনো অজপাড়া গাঁয়। কিন্তু তাদের জীবনের না বলা গল্প চাপা পড়ে যায় সবার অগোচরে।
তেমনি অনেক হকারের মধ্যে কামরুল ইসলাম জীবনযুদ্ধে এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পত্রিকা বিলি করেন কামরুল। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার টানাটানির সংসার। নেত্রকোনা পৌর এলাকার পশ্চিম সাতপাই ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। নিজের জমি-জিরাত বলতে এখন আর কিছু নেই। এক সময় মোহনগঞ্জ উপজেলায় থাকা মাথা গোঁজার ভিটেটুকু অভাবের তাড়নায় বিক্রি করে ভাগ্যের খোঁজে ১৯৭৬ সালে তার বাবা আবুল হোসেন এই শহরে আসেন। তখন কামরুলের শিশু বয়স। বাবার মৃত্যুর পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। নিরূপায় হয়ে সংসারের হাল ধরতে ১৯৮১ সাল থেকে তার এই হকার জীবনের পথচলা।

পত্রিকা বিলির আয় দিয়ে তার সংসার চলে না। তাই দুপুরে বাসায় যাওয়া হয় না, কোনোদিন একটি রুটি আর এক কাপ চা দিয়েই খাবার সারতে হয়। বাসার তিন রুমের একটিতে স্ত্রী জ্যোৎ¯œা আক্তার টেইলারিংয়ের কাজ করেন। কিন্তু একদিন রাস্তা পার হতে গিয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ায় আগের মতো আর কাজ করতে না পারায় দুঃসহ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। বাসা ভাড়া, দুই ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কামরুল ও তার স্ত্রীকে। ছেলে দিদান ইসলাম কারিগরি দ্বিতীয় বর্ষে ও মেয়ে মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলে কামরুল তার দুঃখের বর্ণনা দিতে গিয়ে ঘর্মাক্ত মুখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘এই জীবনডা বড় কষ্টের। টাইম মতো পত্রিকা দিতে না পারলে অনেক কথাই তো শুনতে হয়। আর কোনো উপায় না থাকায় পইড়া আছি এই পেশায়। কত শত খবর বয়ে বেড়াই কিন্তু আমার নিজের খবর কেউ নেয় না’।

 


আরো সংবাদ



premium cement