২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ

হঠাৎ ধর্মঘট ডাকায় নীরব বেনাপোল বাস টার্মিনাল : নয়া দিগন্ত -


যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহ আগে যশোরের জেলা প্রশাসকের সাথে স্থানীয় সুধীসমাজ এবং পরিবহন কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বেনাপোল চেকপোস্ট এবং বেনাপোল বাজার থেকে পরিবহন বা লোকাল বাসগুলো বেনাপোল-যশোর-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো এখন বেনাপোল বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌরবাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা পরিবহন বাসগুলোর যাত্রী ভোরে বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে সে বাসগুলো আবার টার্মিনালে চলে যাবে।
কিন্তু হঠাৎ করে গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পরিবহন বাসগুলোর যাত্রীদের টার্মিনালে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়ায় হয়রানির শিকার হন তারা। কোনো কিছু না জানিয়ে প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বেনাপোল বাস মালিক সমিতি সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
অনেক পাসপোর্ট যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতের পেট্রাপোলে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশনের সাথেই নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী টার্মিনাল কিন্তু বাংলাদেশের বর্ডারে চালু টার্মিনালটি বন্ধ করে দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টার্মিনালে পাঠানো হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাসপোর্টধারীদের।

পাসপোর্ট যাত্রী মেহেদী হাসান জানান, ঢাকা থেকে এসে বর্ডার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌর টার্মিনালে বাস থেকে রাত ৩টায় নামিয়ে দিয়েছে। পরে ২ ঘণ্টা একটি চায়ের দোকানে বসে সকাল হওয়ার পর একটা ইজিবাইক নিয়ে বর্ডারে এসেছি। একজন পাসপোর্টধারী যাত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর পোর্ট ব্যবহারের জন্য টাকা নিয়ে থাকেন। তাহলে পোর্ট আমাদের কি সেবা দিলো? আমরা চাই চেকপোস্টে অবস্থিত স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল থেকে বাসগুলো চালু হোক।
এ ব্যাপারে পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, কয়েকদিন আগে যশোর জেলা প্রশাসকের সাথে আমাদের এবং স্থানীয় সুধীসমাজের সাথে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে যানজটের কথা বলে সব পরিবহন বাস চেকপোস্টের টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নিয়ে বেনাপোল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কাগজপুকুর টার্মিনাল নিয়ে যায় এবং গাড়ি সেখান থেকেই ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলো বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে পৌর বাস টার্মিনালে কাগজপুকুর চলে যাচ্ছিল। দিনের ট্রিপ না থাকা বাসগুলো আমরা বেনাপোল চেকপোস্ট এবং বেনাপোল বাজার থেকে রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে ছাড়ছিলাম আর বাকি সারাদিন টার্মিনাল থেকেই গাড়ি ছাড়া হচ্ছিল।
হঠাৎ করে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসগুলো আসার পর সেসব বাসের যাত্রীদের জোরপূর্বক টার্মিনালে নামিয়ে দেয়। এ সময় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং হয়রানি শিকার হন। পরে সেই যাত্রীদের লোকাল বাসে করে চেকপোস্টে পাঠান টার্মিনালের থাকা পৌরসভার লোকজন।
এখন আমাদের কথা হলো লোকাল গাড়ি যদি চেকপোস্টে যেতে পারে তাহলে আমাদের পরিবহন বাসগুলো চেকপোস্টে যাত্রী নামাতে পারবে না কেন? আমাদের পরিবহন বাসগুলো তো কোনো যানজটের সৃষ্টি করে না বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অহেতুক যানজট বাঁধায় না। তাহলে কেন আমাদের সাথে এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রশাসন?

প্রশাসনের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক সমিতি গতকাল রাতে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে কোনো গাড়ি ছাড়িনি এবং বেনাপোল থেকে সব ধরনের পরিবহন বাস এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান জানান, আমরা তো চেকপোস্টের বাস টার্মিনাল বন্ধ করিনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী টার্মিনালের গেট বন্ধ থাকায় শুক্রবার গভীর রাতে গাড়িগুলোর যাত্রী পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে দিয়েছিল। গতকাল শনিবার ভোরের দিকেও চেকপোস্টে যাত্রী নিয়ে গাড়ি গেছে। রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চেকপোস্টে গেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বাস মালিকের প্রতিনিধিরা তো আমার সাথে আলোচনা করতে পারত? তারা এলাকায় একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য এসব করেছেন। আলোচনা না করেই বাস বন্ধ রাখছে, এটা সঠিক কাজ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement