দলীয় পদ ও বংশীয় প্রভাবে কয়েক যুগ ধরে চলছে সিন্ডিকেট
চিতলমারি দলিল লেখক সমিতি- বাগেরহাট প্রতিনিধি ও চিতলমারী সংবাদদাতা
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের কাছে দল কোনো মুখ্য বিষয় নয়। কিন্তু দলের পদ ব্যবহার করে প্রভাবশালী বংশের লোকদের সভাপতি ও সম্পাদকের পদ দিয়ে গড়ে তোল হয় শক্তিশালী দলিল লেখক সিন্ডিকেট বা সমিতি। এই সিন্ডিকেটের নামে চলে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও গরীবের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেয়ার নানা কৌশল। তাদের শক্তিশালী বাহিনীর হাতে গোটা উপজেলাবাসী জিম্মি। ভয়ে কেউ টু শব্দ করে না। তাই কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে এ সিন্ডিকেটের কার্যক্রম।
গত বৃহস্পতিবার সমিতিতে যৌথ বাহিনী অভিযানে নগদ ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা উদ্ধার ও তিনজনকে আটকের পর উঠে আসে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দলিল লেখক সুব্রত অধিকারী, সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান ও চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও দলিল লেখক শেখ শামিম আনোয়ারকে আটক করে।
সুব্রত অধিকারী বাগেরহাট সদরের খালিশপুর গ্রামের কালিপদ অধিকারীর ছেলে, খান মনিরুজ্জামান চিতলমারী উপজেলার চিতলমারী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের ছেলে ও শেখ শামিম আনোয়ার শিবপুর বেপারীপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মোস্তফা আনোয়ারের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার শিবপুর বেপারীপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে এস এম নান্টু হাসান বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ শুক্রবার সকালে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করেছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদি এস এম নান্টু হাসান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গ্রেফতারকৃত তিনজন আসামিসহ অজ্ঞাত পলাতক আসামিরা চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতির কথিত ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সাধারণ ও নীরিহ মানুষের কাছ থেকে দলিল রেজিস্ট্রিবাবদ সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রতারণামূলকভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। তিনি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি স্থানীয় যৌথ বাহিনীকে মৌখিকভাবে জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যৌথবাহিনী উপজেলা পরিষদের মধ্যে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান চালায়। এ সময় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও মামলার ২ নং আসামির চেম্বারের টেবিলের ডানপাশের ড্রয়ারের ভেতর থেকে বর্নিত সব আসামিসহ পাঁচ-ছয়জন আসামি টাকা ভাগবাটোয়ারা করার সময় নগদ ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকাসহ তিনজনকে আটক করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসকে ঘিরে ৫৫-৬০ জন দলিল লেখক রয়েছেন। তাদের কাছে দল কোনো মুখ্য বিষয় নয়। মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়াই আসল উদ্দেশ্য। তাই ৫ আগস্টের আগে এই সিন্ডিকেটের সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোক এবং ৫ আগস্টের পর সভাপতি সম্পাদক হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির দুই নেতা।
চিতলমারী থানার ওসি এস এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে টাকাসহ তিনজন আসামিকে ঘিরে রাখে। আমাদের খবর দিলে আমরা গিয়ে টাকাসহ আসামিদের থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সমীর কর্মকারকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা সাবরেজিস্ট্রার রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। অফিস বন্ধ তাই রোববারের আগে বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। দলিল লেখকরা অনিয়ম-দুর্নীতি করলে মানুষ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা