ওষুধ কিনতেই টাকা শেষ : পথ্য পাবে কোত্থেকে সাজীদ-সজীবরা
- হারুন আনসারী ফরিদপুর
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেলার সিভিল সার্জনের সরকারি তালিকা অনুযায়ী আহতদের সংখ্যা ৯০ জন। এদের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ রাবার বুলেটবিদ্ধ, কেউ সাউন্ডগ্রেনেডে আহত, আবার কারোর হাত-পা ভেঙে গেছে। অনেকের চোখে আঘাত লেগেছে, অনেকের হাতের কিংবা পায়ের আঙুল ভেঙে গেছে। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠলেও সজীব ইসলাম সানি (২৩) ও সাজিদ মণ্ডল (২০) এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তাদের একজন বর্তমানে ঢাকার সিআরপিতে, আরেকজন নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা এখনো সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি।
সজীব ইসলাম সানি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে রসায়ন বিভাগে অনার্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাবা মৃত আব্দুল মালেক ছিলেন রাজমিস্ত্রী। বিধবা মা আর ছোট একটি বোনকে নিয়ে থাকেন শহরের বায়তুল আমান এলাকায়। ৪ আগস্ট সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে বের হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সানি। থানা রোডে এসে সাউন্ড গ্রেনেড আর কাঁদানে গ্যাসের শিকার হয় মিছিলটি। আত্মরক্ষার জন্য হিতৈষী স্কুলের দিকে ছুটে গেলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার শিকার হন। বেধড়ক পিটিয়ে থেতলিয়ে দেয়া হয় তার শরীর। ডান হাতটিও ভেঙে যায়। ফরিদপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে পাঠানো হয় ঢাকার সিএমএইচে। ডাক্তাররা তার হাতে অপারেশন করে রড ঢুকিয়ে দিয়েছে। তবে নার্ভও ড্যামেজ হয়ে যাওয়ায় হাতের কব্জি এখন আর কাজ করছে না।
ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তালিকায় ৩২ নম্বরে তার নাম তালিকাভুক্ত করা। আহত সানিকে গত দুই সপ্তাহ আগে ফরিদপুরের ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।
ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে অম্বিকাপুর ইউনিয়নের দুলদি গোবিন্দপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর মণ্ডল নামে এক হতদরিদ্র দিনমজুরের ছেলে সাজীদ মণ্ডল। ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষের (পাওয়ার) ছাত্র। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী মিছিলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পূর্ব খাবাসপুরের দিকে দৌড়ে যাওয়ার সময় হিতৈষী স্কুলের পেছনে হামলার শিকার হন তিনি। তার ডান হাতের আঙুল, বাম হাতের মাঝ বরাবর ও ডান পায়ের টাখনুর মাঝামাঝি ভেঙে গেছে। এখন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সাজীদ। গরিব বাবার এই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মিটছে না। পুষ্টিহীনতার শিকার সাজীদের শরীরের হাড়গোড় বেরিয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য পাননি তিনি।
হিতৈষী স্কুলের পিছনে ৪ আগস্ট সাজীদ ও সানির মতো আরো কয়েকজনকে পিটিয়েছিল যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীসমর্থকরা। তাদের মধ্যে ছিলেন করোনায় মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক কে এম রুবেলের ছেলে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১ম বর্ষের ছাত্র লামীম ইসলাম। লামীমের খোঁজখবর নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা। দলটির পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি একটি এনজিও থেকে কিছু আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবরার নাদিম ইতু বলেন, ফরিদপুরে আন্দোলনে আহতদের জন্য আমরা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে টাকা পয়সা সংগ্রহ করে ৯ জনের মতো শিক্ষার্থীকে কিছু সাহায্য করেছি। কিন্তু তাদের জন্য সেভাবে কিছুই করতে পারিনি আমরা। সরকারের উচিত তাদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আলী আহসান বলেন, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের তালিকা তৈরি করছে। ফরিদপুর থেকে ৬০ জনের মতো একটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখনো ঢাকা থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আহতদের মধ্যে আরো অনেকে ছিলেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলে তাদের নাম পাঠানো সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা