শাহিনুরের মা-বাবার কান্না দেখে কাঁদেন প্রতিবেশীরাও
- আসাদুল ইসলাম সবুজ লালমিনরহাট
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অটোরিকশা চালক শাহিনুর আলমের (১৯) কাঁধেই ছিল পুরো সংসারটি। চার সদস্যের ছোট একটি পরিবার। ঢাকা শহরে সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে ছোট বোনকে মাদরাসা পড়ানো, মায়ের ওষুধ কেনাসহ সংসারের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন বসতভিটাসহ একখণ্ড জমি কিনে বাবা-মাকে স্বপ্নের একটি ঠিকানা বানিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হবার নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শাহিনুর। কান্নার ধকল চেপে চেপে কথাগুলো বলছিলেন শহীদ শাহীনুরের মা। শহীদের বাবা-মায়ের কান্না দেখে প্রতিবেশীরাও কাঁদেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের বড় বাসুরিয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জব্বার ও মা গৃহিনী মাছিরন বেগমের ছেলে শাহিনুর আলম। খাস জমিতে তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ সাত সদস্যের এই পরিবারটির বসবাস। ভাই-বোনদের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন শাহিনুর। বড় দুই ভাই মাজেদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলামও অটোরিকশাচালক। তারা বিয়ে করে সংসার আলাদা করেছেন। দুই বোনের মধ্যে একবোন মাজেদার বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন মারুফা পড়াশোনা করছেন। শাহিনুরও এককালে মাদরাসায় পড়তেন।
এভাবে সাত সদস্যের পরিবারটি হয়ে যায় চার সদস্যের। দিনমজুর বাবা আব্দুল জব্বারের অনেক বয়স হয়েছে। তেমন কাজকর্ম করতে না পাড়ায় ২০২৩ সালে লালমনিরহাট থেকে রাজধানী ঢাকায় ছুটে যান শাহিনুর। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে ঢাকাথয় রিকশা চালাতেন। এতে যা উপার্জন হতো তা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। ছোট বোনকে মাদরাসা পড়ানো, মায়ের ওষুধ কেনা ও সংসারের খরচ চলতো সেই টাকায়। শাহিনুরের স্বপ্ন ছিল ঢাকায় অটোচালিয়ে তিনি বাবা-মাকে একটা বাড়ি কিনে দেবেন।
শাহিনুরের মা-বাবা জানান, গত ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার লালবাগ থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে ছিলেন শাহিনুর। হঠাৎ পুলিশের একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শাহিনুরের। পরে লাশ নিজ এলাকায় নিয়ে বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেদাবাগের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ মা শোকে পাগল প্রায়। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ৭০ হাজার টাকা দান করেন। আর কোনো সাহায্য পাননি তারা। তবে, শহীদ শাহিনুরের নামে নামকরণ করা হয়েছে একটি সড়কের। শাহিনুরের বাবা বলেন, আমার ছেলেকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের সঠিক বিচার দেখে যেতে চাই।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সরকার তাদের সহযোগিতা করছে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে শাহিনুরের পরিবারকেও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা