২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১, ২৮ রজব ১৪৪৬
`

মানিকছড়িতে অপরিপক্ক গাছ কাটার হিড়িক, যাচ্ছে ভাটায়

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ভোলাইয়াপাড়ায় কেটে রাখা গাছ : নয়া দিগন্ত -

শুকনো মৌসুমের শুরুতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পাহাড়ের অপরিপক্ব গাছ কাঠার হিড়িক পড়েছে। বন উজাড় করে এসব গাছ ব্যবহার হবে পার্শ্ববর্তী এলাকার ইটভাটায়। বৈধ-অবৈধ উপায়ে যে হারে বন উজাড় হচ্ছে, সে অনুযায়ী বৃক্ষ রোপণ না হওয়ায় সবুজ পাহাড় বিবর্ণ হতে চলেছে।
মানিকছড়ি উপজেলায় কৃষি জমির তুলনায় টিলা ভূমি অনেক বেশি। তবে এখানে সরকারি রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল নেই। ফলে স্থানীয়রা নিজের রেকর্ডীয় বা দখলীয় ভূমির সৃজিত ও অপরিপক্ব গাছ নির্বিচারে কেটে সাবাড় করছে। এতে বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর খাদ্য সঙ্কট বেড়ে গেছে। শীত আসার আগেই ইটের ভাটার আগুনে কাঠ পোড়ানোর অসাধু প্রতিযোগিতার ফলে অপরিপক্ব গাছ কাটার ধুম পড়ে যায়। বন বিভাগের দাবি অপরিপক্ব গাছ না কাটতে প্রয়োজন জনসচেতনতা।

গাড়িটানা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৬৮ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট উপজেলায় সরকারি কোনো বনভূমি নেই। তবে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকায় বন বিভাগের একটি রেঞ্জ অফিস রয়েছে। তাও আবার জনবল সঙ্কটে সেটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অস্ত্রধারী জনবল না থাকায় জনপদে অপরিপক্ব গাছ অবাধে কাটা হলেও বনবিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। ফলে অবাধে ইটের ভাটার জ্বালানি হিসেবে পাহাড়ের কাঠ এখন সমতলমুখী। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, কাজিরহাট, কাটিরহাট, নোয়াহাট, ভুজপুর, নারায়ণহাট, শান্তির হাট, নানুপুর, নয়াবাজার, কাঞ্চননগরসহ বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হয়। এ সুযোগে শুকনো মৌসুমে পাহাড়ে গাছ কাটার হিড়িক পড়ে যায়। গত পনের দিন ধরে পাহাড়ে শীতের আমেজ আসতে না আসতে এখানকার বনাঞ্চলে দা-কুড়ালে সান দিয়ে গাছ কাটতে শুরু করেছে বাগান মালিকেরা।

সম্প্রতি উপজেলার মরাডলু, পান্নাবিল, ভোলাইয়াপাড়া, চেঙ্গুছড়া, দশবিল, কুমারী, বড়টিলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সমতল, পাহাড়ি জনপদে ঘরবাড়ির দ্বারপ্রান্তে সৃজিত ছোট, মাঝারি জায়গার কম বয়সী (অপরিপক্ব) গামারি, কনাক, আকাশি গাছ অবাধে কাটা হচ্ছে। বাগান বা টিলায় দিনের বেলা গাছ কেটে স্তূপ করে রেখে সন্ধ্যার পর চাঁন্দের গাড়ি বা জিপ গাড়িতে দেদারসে সমতলে পাচার করা হয়। প্রতি মণ গাছ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর প্রতি জিপের ধারণ ক্ষমতা ৭০-৮০ মণ। এভাবে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জিপ বোঝাই করে পাহাড়ের কাঠ সমতলের ইটভাটায় নিয়ে আগেভাগে স্তূপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার ভোলাইয়া পাড়ার আমেনা বেগম বলেন, পারিবারিক বিপদ-আপদে নিজ টিলার গাছ কাটতে হয়। জায়গা ফাঁকা হলে নতুন করে আমরা চারা লাগাই। তবে ৭০-৭৫ টাকা মণে গাছের ডালপালা ব্রিকফিল্ডের জন্য স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। আর গাছের গোড়া থেকে মূল অংশটুকু স’মিলে ফার্নিচারের কাঠ হিসেবে প্রতি ঘনফুট ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।

পান্নাবিলের আবদুল করিম বলেন, মানুষজন অভাব-অনটেেন বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব গাছ বিক্রি করে। অভাব না থাকলে পরিপক্ব গাছ আসবাবপত্রের কাঠ হিসেবে বিক্রি করলে অনেক দাম পাওয়া যায়।
গাড়িটানা বন বিভাগের বন কর্মকর্তা কাজী তামিল রসুল বলেন, এ উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল নেই। মানুষজন পারিবারিক প্রয়োজনে নিজ ভূমির অপরিপক্ব গাছ কাটলেও জনবলের অভাবে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা আমাদের সম্ভব হয়ে ওঠে না। অবাধে গাছ কাটার ফলে বন্যপ্রাণীকুলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ফাঁড়ি সড়কে রাতের বেলা জিপ গাড়িতে এসব গাছ পাচার হয়ে থাকতে পারে। অপরিপক্ব গাছ কাটার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে স্থানীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement