১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আলুবীজের দাম, আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

-

- সঙ্কট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি
- বগুড়ার শেরপুরে দিশেহারা কৃষক

বগুড়ার শেরপুরে আলুর বীজ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় বাজারে আলুবীজের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও বীজ মিলছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন। বীজের সঙ্কট দেখা দেয়ায় এবার আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এদিকে সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কৃষকদের জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দামে আলুবীজ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এখন তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা বীজ আলুতে ৫০০-১২০০ টাকা বেশি নিয়ে গোপনে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় দুই হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ লাগে দেড় থেকে দুই টন। সে অনুযায়ী উপজেলায় বীজের প্রয়োজন প্রায় চার হাজার টন। কিন্তু বিএডিসির বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২৩০ টন, ব্র্যাকের মাত্র এক হাজার ১০০ টন, যা অর্ধেকের কম। বিএডিসি, ব্র্যাক, এসিআইসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসব বীজ বিক্রির জন্য উপজেলায় ৫২ জন ডিলার রয়েছেন। এরমধ্যে বিএডিসির ২৩ জন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ১০ জন ও অন্যান্য কোম্পানির ১৯ জন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাত্র কয়েকজন ডিলার সরকারি বিএডিসির আলুবীজ উত্তোলন করেছেন, অধিকাংশ ডিলার এখনো আলুবীজ উত্তোলন না করায় এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। কৃষকরা ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের আলুবীজের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু বাজারে এই কোম্পানিসহ অন্যান্য কোম্পানির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে ওইসব কোম্পানির আলুবীজ। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে কাঙ্খিত আলুবীজ।
মির্জাপুর ইউনিয়নের মাথাইল চাপর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমি এবার ১০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবো। আমার ৬০০ বস্তা বীজের দরকার, পাঁচ মাস আগে ব্রাকের ২৩০ বস্তা বীজ অগ্রিম কিনেছিলাম তিন হাজার ৪০ টাকা বস্তা। এখন যেখানেই যাচ্ছি সবাই বলছে বীজ নেই, পরে ৯ মাইলের ডিলার শাহাদতের কাছে গেলে তিনি চার হাজার ২০০ টাকা দাম হলে বীজ দিতে রাজি হন। পরে শেরপুরের ফিরোজ আলী মাস্টারের কাছ থেকে এসিআই এর ৮০ বস্তা বীজ তিন হাজার ৫০০ টাকা ও ব্রাকের ২০ বস্তা বীজ তিন হাজার ৭০০ টাকায় নিয়েছি। এখনো ২৭০ বস্তা বীজের প্রয়োজন।
উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের আলু চাষি মোফাজ্জল হোসেন, কামাল আহম্মেদ, হাসেন মোল্লাসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ব্র্যাকের ৪০ কেজি ওজনের বীজ আলুর বস্তা বি-গ্রেড তিন হাজার ৮০ টাকা ও এ-গ্রেড তিন হাজার ১৬০ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে ৩৭০০-৪৫০০ টাকায়। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না আলুর বীজ।

কৃষকের দাবি, বীজ কোম্পানির একটি চক্রের সাথে ডিলার-ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আগাম বুকিংয়ের নামে বীজ বাণিজ্য করছে। এমনকি বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অথচ বিএডিসিসহ বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন ডিলাররা বীজ বিক্রির ওপর কমিশন পান।
জানতে চাইলে ব্র্যাকের ডিলার মো: রফিকুল ইসলাম বীজ সঙ্কটের কথা জানিয়ে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এ উপজেলায় বীজের বরাদ্দ নেই। বরং বরাদ্দ আরো কমেছে। তাই এবার শেষ পর্যন্ত আলুবীজের সঙ্কট থেকেই যাবে। বিভিন্ন প্রজেক্টে আলুবীজ অগ্রিম কিনে নেয়ায় সাধারণ কৃষকরা এ সময় এসে বীজ পাচ্ছেন না।
বিএডিসি ও ব্র্যাকের আরেক ডিলার ফিরোজ উদ্দীন মাস্টার বলেন, যেসব কৃষক আগাম বুকিং দিয়েছেন তারাই আগে বীজ পাচ্ছেন।
ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রোর টিএসও শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো অবস্থাতেই কোম্পানি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আকতার বলেন, ডিলাররা নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি দামে বীজ বিক্রি করতে পারবেন না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্রাক, এসিআইসহ বেসরকারি কোম্পানির কত টন বীজ শেরপুরে বরাদ্দ তা আমার জানা নেই। আমরা তাদের লোকজনকে ডেকে নির্ধারিত দামে যেন বিক্রি হয় সে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, আলুবীজ নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট হতে দেয়া হবে না। খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে যেন কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে বীজ কিনতে পারেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement