পঞ্চগড়ে সহস্রাধিক কৃষকের গলার ফাঁস সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্প
সুদ আসলে ১৫ কোটি ঋণের টাকা আদায়ে চলছে মামলা-জমি নিলাম- আসাদুজ্জামান আসাদ পঞ্চগড়
- ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
পঞ্চগড়ে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ পাম্প চালাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে একটি বেসরকারি ব্যাংক। ওই ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করে ঋণের টাকায় বসানো হয় সৌরচালিত সেচপাম্প। অভিযোগ রয়েছে, ২০-২৫ বছরের জন্য এই সেচ পাম্প বসানো হলেও নিম্নমানের প্যানেল ও যন্ত্রাংশ দেয়ায় স্থাপনের এক বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেচপাম্প। আর কৃষকরা বাধ্য হয়ে সেচকার্য চালাতে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন। এতে ফসলের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সেচপাম্প থেকে কোন আয় না থাকলেও মূল ঋণের সাথে দ্বিগুণের বেশি সুদের টাকা আদায়ে মামলাসহ জমি নিলাম করছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে পঞ্চগড়ের ১১টি কৃষক সমবায় সমিতির সহ¯্রাধিক কৃষক।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউপির খারিজা বনগ্রাম শিকারপুর আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি গোলাম রহমান জানান, কৃষকদের কৃষিকাজে সহায়তা করার জন্য মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তা ইকবাল ও কিবরিয়া পঞ্চগড়ে এসে সদর ও বোদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করার পরামর্শ দেন। সমিতির সদস্যদের কৃষি ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশবান্ধব ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সৌর বিদ্যুতচালিত সেচপাম্প স্থাপনের কথা বলেন। তাদের কথামত পঞ্চগড় জেলায় ১১টি কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এসব সমিতির সদস্যদের কৃষি ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ১৭টি সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প বসানোর জন্য ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও শাখার মাধ্যমে গ্রিন এনার্জি প্রকল্পের আওতায় কৃষক সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের জমি বন্ধক রেখে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ বরাদ্দ করা হয়। সেই ঋণের টাকা দিয়ে রহিম আফরোজ ও শেরপা নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ১৭টি সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল ও যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। নির্মাণ করা হয় প্রয়োজনীয় ড্রেন। কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলেন যে, প্রতিটি পাম্প দিয়ে ২০-২৫ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০০-১৫০ বিঘা জমিতে সেচ কার্যক্রম চালানো যাবে। প্রকল্পগুলো দেখভালের জন্য দুই সোলার কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধি এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। শুরুতেই প্যানেল, পাম্প ও যন্ত্রাংশের মান নিয়ে কৃষকদের সন্দেহ থাকলেও তারা তা উড়িয়ে দেন। প্যানেল স্থাপনের প্রথম বছর ভালো সার্ভিস দিলেও পরবর্তী বছর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। এভাবে দুই বছর চলার পর পাম্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্যানেল স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে তারা তাদের সৌর বিদ্যুতচালিত সেচপাম্প ফিরিয়ে নিয়ে ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের বেংহারী ইসলামপুর আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকবাল ঠাকুরগাঁও শাখার মাধ্যমে ২০১২ সালে ৭০ লাখ টাকার ঋণে আমাদের দুটি সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করে দেন। কিন্তু এক বছর চলার পর থেকেই দুটি পাম্পই অকেজো হয়ে আছে। আমরা ব্যাংক ও সোলার স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান সেরপা কোম্পানির সাথে বহুবার যোগাযোগ করেও তারা আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। পাম্প দিয়ে সেচ দিতে না পারায় আমাদের কোন আয় হচ্ছে না। তাই আমরা ঋণের কিস্তিও দিতে পারছি না।
এ নিয়ে কথা বললে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক তাইমুর হোসাইন বলেন, এই ঋণটি দেয়া শুরু হয়েছিল ২০১২-১৩ সাল থেকে। ইতোমধ্যে ১০ বছর চলে গেছে। সমস্যা শুরু হওয়ার পর তারা তো আমাদের জানাননি। সমস্যা সমাধানে আমরা সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং কোম্পানির লোকজনকে একাধিকবার ডেকেছিলাম। তাদের কোনো আগ্রহ দেখিনি। এই প্রকল্পে ঋণ দেয়া হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকের টাকা তো জনগণের টাকা। ঋণের টাকা তাদের পরিশোধ করতেই হবে। তাদের জন্য দু’টি ঋণের জন্যই সুদ জিরো করা হয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ইকবালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ব্যাংকে থাকাকালে সফলভাবেই এই প্রকল্প চলমান ছিল। কৃষকরাও এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে। তাদের আয় দিয়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ হয়েছিল। আমি সেখান থেকে চলে আসার পরই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে প্রকল্পটি রুগ্ন হয়ে পড়ে। দুই সোলার কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধিও সেখান থেকে চলে যায়। প্রকল্পটিতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। ব্যাংকের নিয়ম মেনে সব কিছু করা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়ে সোলার কোম্পানির মাধ্যমে পুনরায় প্রকল্পগুলো চালু করা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা