হারিয়ে যেতে বসেছে কুমিল্লার বাঁশের কুটির শিল্প
- কাজী খোরশেদ আলম বুড়িচং (কুমিল্লা)
- ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম আনন্দপুর। এক যুগ আগেও এ গ্রামে বিদেশীদের আনাগোনা ছিল। বাঁশের তৈরি নান্দনিক জিনিসপত্র কেনার উদ্দেশে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি দেশের মানুষ এসেছেন আনন্দপুরে। শুধু বিদেশী পর্যটক নয়, বিদেশী সংস্থাগুলোরও ভিড় ছিল এ গ্রামে।
আনন্দপুর ও আশপাশের গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার যুক্ত ছিল এই কুটির শিল্পের সাথে। গ্রামজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ ভিড় করতেন এখানে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির ধুম পড়ে যেত। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও ছিল বেশ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আনন্দপুরের সেই আনন্দঘন আবহ এখন ম্লান হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাবে এ শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে মাত্র ১১টি পরিবার যুক্ত আছে এই শিল্পের সাথে। তাদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ শাহ্ জামাল। তিনি কুমিল্লা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের স্বত্ত্বাধিকারী।
প্রায় পাঁচ দশক আগ থেকে তার মৃত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের হাত ধরে বুড়িচংয়ে এ শিল্পের বিস্তার লাভ ঘটে। বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে শাহ্ জামাল সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি শাহ্ জামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমনে তিনি রঙতুলির কাজ করে যাচ্ছেন। পাশে কাজ করছেন তার ভাই এবং কয়েকজন প্রতিবেশী। মাটির ঘরে বেতবোনার মেশিন। পাশে উৎপাদিত টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, কলমদানি, ওয়ালমেট, ক্যালেন্ডার, দরজা-জানালার পর্দা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
শাহ্ জামাল জানান, ৫২টি পণ্য উৎপাদন করে আলপনা করেন তিনি। মাসে তার ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার স্বর্ণপদক পান তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও সম্মাননা পেয়েছেন। শাহ্ জামাল জানান, কুমিল্লায় প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব নেই। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি নেই। নেই সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা। সময়ের সাথে চলতে গেলে লাগে প্রযুক্তির ব্যবহার। সেটিও নেই তার। বিশেষ করে পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন তিনি।
শাহ্ জামাল আরো জানান, বাঁশের তৈরি শো-পিসের ব্যাপক চাহিদা। তবে বাজারজাতকরণের আধুনিকায়ণ নেই। সেই কারণে লাভের টাকাটা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় তিনি আনন্দপুর হাজিবাড়ির পৈতৃক ভিটায় গড়ে তোলেন কুমিল্লা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস নামক একটি প্রতিষ্ঠান। চীন, জাপান, কলম্বিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ইতালি ও ফ্রান্সের প্রতিনিধি দল সফর করেন তার প্রতিষ্ঠানে।
ব্যবসা ভালোই চলছিল। কাঁচামালের সঙ্কট নেই, থেমে নেই উৎপাদনও। বিক্রিতেও ভাটা পড়েনি। কিন্তু প্রযুক্তির আগ্রাসনে তাল মিলাতে পারছেন না। এদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে নিজেরাও প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারছেন না। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠাণের অনেকেই এখন পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা চান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা