টিন শেড থেকে আলিশান বাড়ি গাড়ি অঢেল সম্পদ
লালমনিরহাটে আ’লীগ নেতা হুন্ডি সুমনের আমলনামা- আসাদুল ইসলাম সবুজ লালমিনরহাট
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৯
শত শত কোটি টাকার মালিক লালমনিরহাটের এক আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান। তার আছে আলিশান বাড়ি, আবাসিক হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমি-জমা ও বিলাসবহুল গাড়ি। বহুল আলোচিত নেতা সুমন খান ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।
গত ১১ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার তিস্তা টোলপ্লাজায় সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান ও তার সঙ্গী রাজু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে লালমিনরহাট সদর থানায় তিনটি ও ঢাকায় তিনটি অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হত্যা মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, জেলা শহরের কালীবাড়ি মাস্টারপাড়া এলাকার মৃত বাচ্চু খানের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান। হুন্ডি ব্যবসার কারণে তিনি জেলাজুড়ে হুন্ডি সুমন নামে পরিচিত। পৈতৃক সূত্রে পিতার সারের দোকান ও ডিলারশিপ এবং পৌর শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার একটি টিনশেড বাড়িতে ছিল তাদের জীবনযাপন।
কিন্তু ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুমন খান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। এর আগে থেকে হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন সুমন। হুন্ডিই তার মূল ব্যবসা। এলাকার ৪০-৫০ বেকার যুবককে নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্যাদের মাধ্যমে জেলায় চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ভয়ভীতি, হুমকি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন বাণিজ্য, বাফার গোডাউন দখল, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি, সরকারি বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ডিও ব্যবসা, গরুর হাট দখল, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজে নিয়োগ, জমি দখল, সালিস-বিচারের নামে অর্থ আদায় ও বিরোধী মতের মানুষের ওপর দমন-নির্যাতন চালিয়েছেন।
এভাবেই রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খান। পৌর শহরের কালীবাড়িতে একটি তিন তলার আলিশান বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। বাড়িটির বাইরে থেকে যতটুকু দৃষ্টিনন্দন মনে হয় ভেতরে প্রবেশ করলে বোঝা যায় এটি জেলার অন্যতম ‘রাজকীয় প্রাসাদ’। বাড়ির ভেতরের প্রতিটি কারু কাজ দেখে মনে হয় যেন স্বর্ণখচিত।
এ ছাড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার রয়েছে ৭ তলা অভিজাত হোটেল (আবাসিক), খান চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বহুতল দুটি আবাসিক ভবন, নিরাপদ বাজার, মোবাইল ব্যবসা, সারের ডিলারশিপ, কোটি টাকা দামের গাড়ি ও বিপুল পরিমাণ জমি। সুমন খান তার স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, কর্মচারীসহ নামে-বেনামে ৮-১০টি ব্যাংকে রেখেছেন শত শত কোটি টাকা। অবৈধ এসব অর্থ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।
সিআইডির মামলায় বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন খানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচারে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে সুমন খানের ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে ২৩৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৬০ টাকা। তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার রুমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৫ হাজার ৩১০ টাকা। সুমন খানের কর্মচারী লালমনিরহাট পুরানবাজার এলাকার বাসিন্দা হারুনের ছেলে তৌকির আহমেদ মাসুমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৮৬ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ১২৭ টাকা পাওয়া গেছে। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা, স্থানান্তর ও রূপান্তরের তথ্য মিলেছে।
এ ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর লালমনিরহাট সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হাই সরকার বাদি হয়ে মানিলন্ডারিং আইনে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। তা ছাড়া লালমিনরহাটসহ ঢাকায় তার বিরুদ্ধে আরো ৬টি মামলা রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবরে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সুমন খানও গা ঢাকা দেন। অবশেষে সোমবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার তিস্তা টোলপ্লাজা দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় সুমন খান ও তার সঙ্গী রাজু মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ: কাদের বলেন, সুমন খানের বিরুদ্ধে সদর থানায় তিনটি ও ঢাকায় তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। সোমবার রাত ১১টায় তিস্তা টোলপ্লাজায় সুমন খানসহ আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা