১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মিরসরাইয়ে বিভিন্ন ভাতার টাকা নিয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা

-


চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর থেকে পাওয়া বিভিন্ন ভাতার টাকা হ্যাকাররা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উপজেলার বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীদের টাকা এরইমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে জমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবন্ধী ভাতা জমা হবে বলে জানা গেছে।
উপজেলার পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী হোরা মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার মোবাইলে ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে নাম জানতে চাওয়া হয়। আমি নাম বলার পর ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে বলছেন। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর নতুন করে ভাতার কার্ড করা হচ্ছে। আমি যেন জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি ও ভাতা বই নিয়ে অফিসে যোগাযোগ করি। এর কিছুক্ষণ পর আমার নম্বরে একটি কোড নম্বর এলে তিনি আবার কল দিয়ে সেই কোড নম্বর জানতে চান। আমি কোড নম্বরটি বলে দিই। পরদিন ভাতার টাকা তুলতে গেলে দেখি আমার নম্বরে ভাতার এক হাজার ৮০০ টাকা জমা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা নেই।’ হোরা মিয়া আরো বলেন, ‘এভাবে আমাদের গ্রামের নুরুল ইসলাম ওরফে সুজা মাস্টার এবং হেলু সওদাগরসহ অনেকের টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।’

উপজেলার মিঠানালা এলাকার গৃহবধূ সাফিয়া আক্তার বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার ছেলের উপবৃত্তির টাকা নিয়ে গেছে একটি প্রতারক চক্র। পরে মোবাইল ব্যাংকিং অফিসে গিয়ে নতুন পিন নম্বর দেয়ার পর ঠিক হয়েছে।’
উপজেলা সহকারী সমাজসেবা অফিসার সাহাব উদ্দিন জানান, উপজেলায় বয়স্ক ভাতা পায় ১৩ হাজার ৬২৫ জন, বিধবা ভাতা পায় চার হাজার ৭০০ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা পায় ছয় হাজার ৯৮৮ জন। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকা করে এক হাজার ৮০০ টাকা, বিধবাভাতা ৫৫০ টাকা করে তিন মাসের এক হাজার ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা ৮৫০ টাকা করে তিন মাসে দুই হাজার ৫৫০ টাকা এক সাথে আসে। গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে এবং নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা ভাতাভোগীর মোবাইলে নগদ নম্বরে জমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবন্ধী ভাতাও জমা হবে।

তিনি আরো জানান, ভাতার টাকা জমা হওয়ার পর হ্যাকাররা ভাতাভোগীদের নম্বরে ফোন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও বই উপজেলায় আনার কথা বলে ওটিপি কোড পাঠায় বলে অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে গ্রাহক থেকে কোড নিয়ে নম্বর হ্যাক করে ভাতার টাকা তুলে নেয় হ্যাকার চক্র। এ বিষয়ে ভাতাভোগীদের আরো শতর্ক থাকতে হবে। তাদের নম্বরে যাওয়া কোড যেন তারা কাউকে বলে না দেন। তাদের বোকামির কারণেই হ্যাকাররা ভাতার টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। গত কয়েকদিনে ভাতাভোগীদের অনেকেই টাকা খুঁইয়ে অবশেষে অফিসে এসেছেন। তাদেরকে তখন শতর্ক করে দেয়া ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে। কেওয়াইসি পদ্ধতিতে গ্রাহকরা যদি পিন নম্বর পরিবর্তন করে নেন এবং কাউকে পিন নম্বর না বলে দেন, তাহলে হ্যাকাররা টাকা নিয়ে যাওয়ার আর সুযোগ পাবে না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান লিনা বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে কোনো ভাতাভোগীকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য ফোন দেয়া হচ্ছে না। হ্যাকাররা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যেই এভাবে কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফোন দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ভাতাভোগীরা সচেতন না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাদেরকে আমরা পিন নম্বর পরিবর্তনসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement