তোফাজ্জল হত্যার বিচার দাবি পরিবারের
- আসাদুজ্জামান ভালুকা (ময়মনসিংহ)
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ময়মনসিংহের ভালুকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিল থেকে ধরে নিয়ে রাজমিস্ত্রী তোফাজ্জলকে (২৪) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শহীদ তোফাজ্জল হোসেন নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। পিতৃহারা তোফাজ্জল মা ও ছোট ভাই মোফাজ্জলকে (২১) নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। খুন হওয়ার তিন মাস পার হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে পারেননি। এদিকে একটি প্রভাবশালী মহল হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সন্তান হত্যার বিচার চান মা হাজেরা খাতুন।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহত তোফাজ্জলের বন্ধু মামুন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী জৈনা বাজার থেকে একটি মিছিল ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকায় আসে। এ সময় আওয়ামী লীগের লোকজন মিছিলটি প্রতিহত করার লক্ষ্যে লাঠিসোটা নিয়ে ওই মিছিলের ওপর হামলা চালায়। এতে মিছিটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় রাজমিস্ত্রী তোফাজ্জল হোসেনকে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা আহত তোফাজ্জলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত পপুলার ক্লিনিকে নিয়ে যান। কিন্তু ডাক্তার তাকে চিকিৎসা না দিলে পরবর্তিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশটি শ্রীপুর থানার এসআই ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে হস্থান্তর করে। ৫ আগস্ট পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্থান্তর করে। পরদিন গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তোফাজ্জলের লাশ দাফন করা হয়।
নিহত তোফাজ্জল হোসেনের মা হাজেরা খাতুন ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে জানান, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে তার স্বামী ২০০৪ সালে মারা যান। তার পর থেকেই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সন্তানদের বড় করেন এবং তিন মেয়েকে বিয়ে দেন। চার বছর আগে দুই ছেলে তোফাজ্জল হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেনকে নিয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন নগর হাওলা মুদি ব্যবসায়ী আবুল কাশেমের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে তোফাজ্জল রাজমিস্ত্রী ও মোফাজ্জল পোশাক কারখানায় এবং তিনি মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। ৪ আগস্ট তোফাজ্জল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দোলনে মিছিলে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত তোফাজ্জলের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন জানান, ভাইকে হারনোর পর তার মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাছাড়া বাসা ভাড়া পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান এবং মানুষের ক্ষেত-খামারে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ভাইকে হারানোর বিনিময়ে দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হলেও কর্মসংস্থানের অভাবে তিনি তার মাকে নিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি তার ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
এদিকে নিহত তোফাজ্জলের পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলে হত্যা ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে না পারায় ভালুকা মডেল থানায় রকিবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে সাবেক এমপি এম এ ওয়াহেদকে প্রধান আসামি করে ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০০ জনের নামে একটি অভিযোগ এবং আদালতে আব্দুল মান্নান ও হৃদয় মাহমুদ জান্নাত নামে দুই ব্যক্তি পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের করলেও পরবর্তিতে রহস্যজনক কারণে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি সামছুল হুদা খান জানান, অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন, থানায় এসে অভিযোগটি বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা