বড়লেখায় পাউবোর খাল খননে অনিয়ম, সড়কে ধস
- ফয়সাল আহমেদ বড়লেখা (মৌলভীবাজার)
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মাধবছড়া খাল পুনঃখননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাজে অনিয়মের খেসারত দিচ্ছে প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। খালের এক পাশের ভূমি পতিত রেখে বিপরীত দিকের শত বছরের এলজিইডি রাস্তা কেটে খাল পুনঃখনন করায় ধসে পড়ছে রাস্তা, বসতবাড়ি, মসজিদ ও গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে পাউবোর এই খাল পুনঃখনন প্রকল্পের প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা গেল কোথায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতরের ইবিএ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার মাধবছড়া খাল পুনঃখনন কাজ শুরু করে মৌলভীবাজার পাউবো। এতে ব্যয় ধরা হয় তিন কোটি ৬২ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮ টাকা। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এরপর হাকালুকি হাওর থেকে ভোলারকান্দি ভায়া কামিলপুর পর্যন্ত ৫.৮০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন কাজ করে টিটিএসএল-জয়েন্ট ভেঞ্চার নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্নতো দূরের কথা, কাজের শুরুতে এলাকাবাসী অভিযোগ করে পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের সঠিক সীমানা নির্ধারণ না করেই স্বেচ্ছাচারিভাবে খননকাজ চালায়। খালের ভূমি পতিত রেখে আমবাড়ি-ভোলারকান্দি এলজিইডির ইটসলিং রাস্তা কেটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। সঠিকভাবে খালের ডাইক (বাঁধ) নির্মাণ করেনি। বিক্রি করা হয়েছে খালের মাটি। শত বছরের রাস্তার বেশির ভাগ কেটে ফেলায় সুজানগর ইউনিয়নের সালদিঘা, ভোলারকান্দি, আমবাড়ি ও রফিনগর গ্রামের বাসিন্দারা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। খনন কাজের অনিয়মের অভিযোগ করলে ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীকে নানা ভয়ভীতি দেখায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাধবছড়া খালের দক্ষিণ পাড়ের আমবাড়ি-ভোলারকান্দি এলজিইডি রাস্তা ধসে পড়েছে। স্বেচ্ছাচারিভাবে খাল খননে দেখা দিয়েছে এলাকার বসতবাড়িতে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। হেলে পড়েছে মসজিদ-গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর। চলাচলের রাস্তাটি বছর ধরে একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মক্তার আলী, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ছলফু মিয়া, সালদিগা গ্রামের বাসিন্দা রজব উদ্দিন, লুৎফুর রহমান, হারিছ আলী, ছিদ্দিকুর রহমান, মুসলেহ উদ্দিন, শিক্ষক ফখরুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, পাউবো কর্মকর্তারা মাধবছড়ার সঠিক সীমানা নির্ধারণ না করেই অপরিকল্পিতভাবে খনন কাজ শুরু করেন। উত্তর পাশে খালের ভূমি পতিত রেখে দক্ষিণ দিকের এলজিইডির ইটসলিং রাস্তার বেশির ভাগ কেটে ফেলে। এলাকাবাসী রাস্তা কাটতে বাধা দিলে পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের লোকজন বিগত সরকারের দলীয় প্রভাব ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে খনন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যায়। পাউবোর খাল খনন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, অপরিকল্পিত খাল খননে সরকারি রাস্তাতো গেছেই, সাথে বসতবাড়ি এবং মসজিদ গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। তাদের প্রশ্ন কার উপকারের জন্য এ খাল খনন প্রকল্প। আর প্রকল্পের পৌনে চার কোটি টাকাই বা গেল কোথায়। তারা তদন্তপূর্বক খাল খননের অনিয়ম-দুর্নীতি আর অর্থ লোপাটের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বলেন, খননকাজের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি এখন চলাচল অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি জনসাধারণের চলাচল উপযোগী করতে খালের পাড়ের কিছু মাটি এনে রাস্তায় ফেলায় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বড়লেখা ইউএনওকে চিঠি লিখেছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল জানান, ১৬ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের ৫.৮০ কিলোমিটার শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে। তবে সরেজমিন খননকাজ চলমান থাকতে দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রথম বছর (২০২২ সাল) খাল খননের নামে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে গেছে পাউবো। এরপর আর কোনো কাজই হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা