বেতাগীর ৬৬ জন গ্রাম পুলিশের কষ্টে গাঁথা জীবন
- কামাল হোসেন খান, বেতাগী (বরগুনা)
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গ্রামীণ জনপদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রাম পুলিশের বিশেষ অবদান রয়েছে। এসব সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেও কষ্টে ভরা জীবন গ্রাম পুলিশের। স্বল্প বেতনভুক্ত এসব গ্রাম পুলিশ সার্বক্ষণিক গ্রামীণ জনসাধারণের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখলেও ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয় না। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৬৬ জন গ্রাম পুলিশ জানান, দ্রব্যেমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বেতাগী উপজেলায় চারটি পদ শূন্য থাকায় সাত ইউনিয়নের ৭০ জন গ্রাম পুলিশ থাকার কথা থাকলে আছে ৬৬ জন। ইউনিয়নের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে সেখানেই ছুটে যান তারা। তারা প্রতি মাসে বেতন পান ছয় হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে তিন হাজার ২৫০ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পায় তিন হাজার ২৫০ টাকা। এই টাকাও তারা নিয়মিত পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই টাকা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস।
মাসের পর মাস অপেক্ষা করার পর তারা বেতন তুলতে পারেন। মাসিক বেতন ছাড়া তারা অন্য সুযোগের মধ্যে শুধু দু’টি ঈদে তারা বেতনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস পান। এ ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।
এসব গ্রাম পুলিশের সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও বিভিন্ন সড়কে রাত্রিকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন, গ্রাম আদালত, গ্রামে কোনো সংস্থার কর্মসূচি চলাকালীন ও সড়ক দুর্ঘটনার স্থানে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তথ্য প্রদান, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর সংবাদ থানায় জানানো, মাদকদ্রব্য ও জুয়া প্রতিরোধে প্রশাসন কর্তৃক অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতাসহ অগণিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন এসব গ্রাম পুলিশের সদস্যরা।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের সচিব লিটন সমাদ্দার বলেন, সব সময় ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে অর্থ থাকে না। ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে টাকা জমা হলেই গ্রাম পুলিশের বেতন পরিষদ করা হয়। বিবিচিনি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবু বক্কর সিদ্দিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সারা জীবন ধরে গ্রামের মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। সেই তুলনায় আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই।
ওই একই ইউনিয়নের আরেকজন গ্রাম পুলিশ বেলাল হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে বেতনের এ টাকা দিয়ে কী হয়? ছেলেমেয়েদের ভালো কিছু খাওয়াতে পারি না। বাবা হিসেবে এর থেকে আর কষ্টের কী হতে পারে।
একাধিক গ্রাম পুলিশ সদস্যরা জানান, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পোষ্য কোঠা থাকলেও আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোনো কোঠা নেই। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের চাকরিটা যেন জাতীয়করণ করা হয়।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, গ্রাম পুলিশের মাসিক বেতন সরকারি অংশের টাকা তারা নিয়মিতই পান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা