০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জেলেরা অসহায়

মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নামে জেলে কার্ড
-

বংশ পরম্পরায় জেলে, মাছ শিকার ছাড়া যাদের সংসার চলে না, সেই প্রকৃত জেলেরাই সরকারি তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারেননি। নিবন্ধন না থাকায় কোনো খাদ্য সহায়তাও তারা পান না। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা দেখে হতবাক এলাকাবাসী।
এ উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের তালিকায় রয়েছেন- শতাধিক মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী এবং ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। এরাই হয়েছেন নিবন্ধিত জেলে, আছে জেলে কার্ড। কার্ডের বদৌলতে পান খাদ্য সহায়তা। তাদের লাইনেও দাঁড়াতে হয় না। অন্য লোকের মাধ্যমে চাল চলে যায় বাড়িতে। আর মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের বরাদ্দকৃত সহায়তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কিছু প্রভাবশালী লোকজন আত্মসাৎ করেছে। মৃত ব্যক্তির পরিবার ও প্রবাসীরা জানেনও না যে তাদের নামে জেলে কার্ড রয়েছে।

কাউখালী মৎস্য অফিস দাবি করেছেন, ২০১২ সালের তালিকা তৈরির পর ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর হালনাগাদ করে কিছু ভুয়া লোককে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন জেলে যুক্ত করা হয়। উপজেলায় সর্বমোট ২২৭৫ জন নিবন্ধিত জেলেদের কার্ড রয়েছে।
জেলেদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে, চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের কেশরতা বিজয়নগর ৯ নং ওয়ার্ডের ৮৫ জন নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়- এ তালিকায় পাঁচজন মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে। এদের মধ্যে আবদুল আউয়াল হাওলাদারের ছেলে মিজান হাওলাদার জানান, তার বাবার নামে যে কার্ড রয়েছে তা তিনি জানতেন না। কিন্তু তার নামে বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা এতদিন আত্মসাৎ করে আসছে।
বিজয়নগর গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান জানান, কেশরতা বিজয়নগর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজিজুল হক ও সরকারের মৎস্যজীবী নেতারা এসব ভূয়া নিবন্ধিত জেলেদের নামের বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা ভুয়া মাস্টাররোল দেখিয়ে আত্মসাৎ করে আসছেন। তিনি আরো জানান, তার নামে বরাদ্দকৃত কার্ড ইউপি সদস্যের কাছে চাইতে গেলে তাকে গালাগালি করে বলেন তোদের নামে কোন জেলে কার্ড নাই। অথচ আমার নামে আগে থেকেই খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ হয়ে আসছে।
চিরাপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু জানান, এ তালিকা প্রায় ১২ বছর আগের করা, তাই পরিবারের লোকজন কার্ড নিয়ে এলে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি। নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলে ৬০ দিনের জন্য ৫৬ কেজি এবং ৩০ দিনের জন্য ৪০ কেজি চাল পেয়ে থাকেন।

জেলে নান্না মোল্লা জানান, ভুয়া জেলেদের কারণে খাদ্য সহায়তা বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা। তারা টাকা ছাড়া তালিকায় নাম উঠান না, তাই প্রকৃত জেলেরা বাদ পরে যান।
পুরস্কারপ্রাপ্ত মাছের ঘেরের স্বত্বাধিকারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান ফিরোজ জানান, জেলে কার্ডের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তদের মধ্যেও শতশত কার্ডধারী রয়েছেন যারা জেলে নয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, তালিকাটি অনেক আগের থাকায় প্রকৃত জেলে বাছাইয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল মোল্লা জানান, মৃত ব্যক্তি ও অন্যান্য পেশায় জেলে কার্ড থাকার অভিযোগ পেয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে সরজমিনে গিয়ে তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছি।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার জেলেদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেয়। তবে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে করা পরিচয়পত্র নীতিমালা প্রতি বছর জুলাই হতে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উপজেলা মৎস্য অফিস তালিকা হালনাগাদে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি থাকলেও বাস্তবে তা নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement