২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার টন শুঁটকি রফতানি
কদর বাড়ছে বিদেশে- এসএম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও বাড়ছে শুটকির কদর। চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলজুড়ে উৎপাদিত মুখরোচক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুটকি এখন হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হচ্ছে। ফলে দেশে আসছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০৩৮.১৯ টন শুটকি রফতানি করে ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫৯ ডলারের সমপরিমাণ ৭২ দশমিক ১৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুটকি রফতানির পরিমাণ ছিল ২২৬৩.৮২ টন। টাকার অংকে যা ৫২.৭৯ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
মৎস্য অধিদফতরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ড. মকসুদুল সুজন জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুটকি রফতানি ও আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুটকি রফতানির পরিমান আরো বাড়বে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবু শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য অধিদফতরের সরাসরি তত্ত্বাবধায়ন ও তদারকির কারণে এখন বিদেশে হিমায়িত চিংড়িসহ নানা প্রজাতির তাজা মাছ ও শুটকি (লবণ যুক্তসহ) রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। আর এতে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
এ দিকে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া শুষ্ক ও তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় এবার চট্টগ্রামের পশ্চিম-পটিয়ার জুলধা, চর-পাথরঘাটা, খোয়াজ নগর, পটিয়ার শিকলবাহা, আনোয়ারার রায়পুর, বাঁশখালীর শেখেরখীল, খানখানাবাদ, মহেশখালী, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলের প্রায় দুই শতাধিক স্পটে হরেক রকম শুটকি তৈরির ধুম লেগেছে।
এসব এলাকায় ছুরি, লইট্যা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, বাইল্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, চিংড়ি, লাক্ষা, তাইল্যা, পোঁপা ও চাপিলাসহ নানা প্রজাতির মাছের শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ক্ষতিকারক কীটনাশক ও ডিটিটি ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর তৈরি করা শুটকির সুখ্যাতি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি রফতানির পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনি এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে। প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ শুটকি উৎপাদন হয় তার বেশির ভাগই উৎপাদন হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়।
চট্টগ্রামে এখন শীত মৌসুম ছাড়াও বছরজুড়ে প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে ও বাতাসে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠেছে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শেড।
কর্ণফুলী উপকূলের পশ্চিম পটিয়ার চরপাথরঘাটা, ইছানগর ও ডাঙ্গার চর ও বাঁশখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ বাঁশের মাচাং তৈরি করে আবার কেউ পলিথিন বিছিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করছে শুটকি। আর এ কাজে শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিককদের শুটকি তৈরি করতে দেখা যায়।
ইছানগর এলাকার শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন প্রজাতির তৈরি করা শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে পাঠানো হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, হংকং, চায়না ও তাইওয়ানের মতো দেশেও শুটকির কদর বড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপজেলা পর্যায়ে যেসব এলাকায় শুটকি তৈরি করা হয় সেখানে সুষ্ঠু তদারকি করা হচ্ছে এবং নারী-পুরুষ শ্রমিকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা